
লজ্জাবতী মানে যে খুব লজ্জা পায়। লজ্জা হচ্ছে মানুষের অনুভূতি। কিন্তু গাছের পাতা কী করে লজ্জাবতী হয়? বাইরের কোনও কিছুর সংস্পর্শে পাতা কুঁকড়ে যায় বলে গাছটির নাম হয়েছে লজ্জাবতী গাছ।
তুমি যদি লজ্জাবতী গাছের পাতা ছুঁয়ে থাকো, তাহলে নিশ্চয়ই দেখেছ পাতাটি কেমন চুপসে যায়। লজ্জা ও অভিমানে নেতিয়ে পড়ে যেন। এত লজ্জা দেখে মনে হবে, তোমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে পাতাটি। কিন্তু এই লজ্জাবতী পাতার এত লজ্জা কেন? কীসের অভিমান তার? চলো তার লজ্জার কারণ জেনে নিই।
আমরা যেটাকে লজ্জা বলছি, গাছটির ক্ষেত্রে আসলে তা নয়। বাইরের কোনও কিছুর স্পর্শ লাগলে গাছটি আত্মরক্ষার জন্য নিজেকে ছোট করে ফেলে। বিপদ হতে পারে ভেবে নিজেকে গুটিয়ে নেয়। পাতা সংকুচিত হয়ে যাওয়া দেখে আমরা মনে করি, বেচারা লজ্জায় মরে গেছে।
আসলে লজ্জাবতী গাছ খুবই নরম। শক্ত কোনও কাণ্ড বা ডাঁটি নেই। পাতা কোমল হওয়ায় গাছটি খুব স্পর্শকাতর।

লজ্জাবতী পাতার গোড়ার কোষ পানিভর্তি হয়ে ফুলে থাকে। গোড়ার কোষগুলো বড় বড় হওয়ায় পানি সহজে চলাচল করতে পারে। কোষে যখন পানি থাকে, তখন পাতা ডাঁটিসহ সোজা হয়। কিন্তু পাতায় স্পর্শ লাগলে গাছটির সারা দেহে এক ধরনের রাসায়নিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। পাতার গোড়ার বড় বড় কোষের ভেতরের পানি, খনিজ লবণ ও অন্যান্য তরল পদার্থ সরে যায়। সরে গিয়ে পেছনের দিকের কোষে স্থানান্তরিত হয়। ফলে পাতা কুঁকড়ে গিয়ে নুয়ে পড়ে। অর্থাৎ চুপসে যায়, আমরা যেটাকে বলি লজ্জা পেয়েছে।
কিছুক্ষণ পর পাতার গোড়ার কোষে পানি জমা হলে আবার পাতা সোজা হয়। লজ্জা ভেঙে যেন মাথা তুলে দাঁড়ায়।
তোমার আশেপাশে কখনও গাছটির দেখা পেলে, পাতা স্পর্শ করে গাছটির লজ্জার পরীক্ষা করতে পারো।