
বিয়ের কনে আমরা কীভাবে চিনতে পারি, বলুন তো? পরনে গাঢ় লাল বেনারসি যার সেই তো কনে। ঘরোয়া পরিবেশে হোক অথবা জমকালো অনুষ্ঠানে হোক, লাল বেনারসি ছাড়া কি আর বিয়ের কনে সাজা যায়! বহুল প্রচলিত এই রীতি আজও আমাদের মাঝে চলমান। কনের শাড়ি কেনার সময় ম্যাটেরিয়াল কাতান, টিস্যু বা মসলিন যা-ই হোক, রং হিসেবে যেন লালকেই বেছে নিই অনায়াসে। কিন্তু কখনও ভেবে দেখেছেন কি, বিয়ের আসরে লাল বেনারসির বদলে কেন নীল, হলুদ, সবুজ রং বেছে নেওয়া হয় না?
লাল রংকে বলা হয় ভালোবাসার অনন্য প্রতীক। কারণ, লালের মাঝেই একাধারে প্রকাশ পায় বিপ্লব, ক্রোধ ও শক্তি। অন্যান্য রঙের পাশে লাল রংকে সব সময়ই আলাদা করে চেনা যায়। এর পেছনেও পরিষ্কার ব্যাখ্যা রয়েছে। লাল রঙের তরঙ্গদৈর্ঘ্য বেশি হওয়ায় খুব সহজেই এটি আমাদের দৃষ্টি কাড়ে। বিয়ের কনে হিসেবেও সবার নজর কাড়তে অধিকাংশ মেয়ে লাল রঙের শাড়িকেই বেছে নেয়।
যুগ যুগ ধরে উপমহাদেশীয় অঞ্চলের দেশগুলোতে বিয়ের শাড়িতে পরিবার লাল রংকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকে। সাধারণত মেহেদি, হলুদ, বৌভাত সব অনুষ্ঠানে অন্য রঙের শাড়িকে বেছে নিলেও বিয়ের মূল অনুষ্ঠানে কনেরা নিজেদের লাল শাড়িতেই রাঙিয়ে তুলতে চান। এর পেছনের কারণ খুঁজতে গেলে আরও কিছু ব্যাখ্যা পাওয়া যায়।
লাল বেশ শক্তিশালী একটি রং। খুব দূর থেকে দৃষ্টি আকর্ষণের ক্ষেত্রে এই রঙের জুড়ি নেই। এ ছাড়া লাল রং উষ্ণতা, ক্ষমতা, ভালোবাসা, আন্তরিকতা, সাহসিকতা, প্রবলতা, শক্তি, উদ্দীপনা, উত্তেজনা, রক্ত, যুদ্ধ, সহিংসতা, আবেগ, বিপদ, আগুন প্রভৃতি ভাব প্রকাশে ব্যবহৃত হয়। প্রাচীন জ্যোতিষ শাস্ত্রেও লালকে বেশ গুরুত্বের সাথে দেখা হয়েছে। একইসাথে এটি শৌর্য ও বিজয়ের প্রতীক। অন্যদিকে গৌরবের রংও লাল। প্রাচীন চিকিৎসা শাস্ত্র থেকে জানা যায়, সুস্বাস্থ্য ও শক্তি মানুষের শরীরের গোলাপি আভা থেকেই প্রকাশিত হয়।
সনাতন ধর্মের ইতিহাসে ধর্মীয় রং হলো লাল। অধিকাংশ মাঙ্গলিক কাজে লাল রঙের ব্যবহার হয়ে থাকে। খেয়াল করলে দেখবেন, প্রায় সব দেবদেবীর মূর্তিতে লাল সিঁদুরের তিলক পরানো হয়। লাল তিলক লাগালে ব্যক্তির মধ্যে তেজস্বিতা, পরাক্রম, গৌরব ও যশের অস্তিত্ব আছে বলে মনে করা হয়।
তাই দৃঢ়চিত্তে নতুন অধ্যায়ের শুরুতে মেয়েরা ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে বিয়ের আসরে লাল বেনারসিকেই বেছে নেন নির্দ্বিধায়।