০২ অগাস্ট ২০২৫

কীভাবে এলো সপ্তাহের সাত দিনের নাম?

হামিদুল হুদা স্তেভান
২৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৪:০১
সপ্তাহের সাত দিনের নাম যেভাবে এলো। ছবি : সংগৃহীত

স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর বাচ্চাদের বেশ কয়েকটি জিনিস মুখস্থ করতে হয়। ফল-ফলের নাম ছাড়াও সে তালিকায় থাকে ইংরেজি সপ্তাহের সাত দিনের নাম। কিন্তু কখনও কি মাথায় এসেছে, দিনগুলো কোথা থেকে এই নাম পেল? কে দিল তাদের চমৎকার সব নাম?

অনেক বছর আগের কথা। যখন ঘড়ি বা ক্যালেন্ডার কিছুই ছিল না, তখন কিন্তু আমাদের চাঁদমামার চলাফেরা বা গতিবিধি দেখেই দিনক্ষণ ঠিক করত মানুষ। যেমন প্রথম দিনের চিকন চাঁদ, এরপর মাঝারি আকারের চাঁদ, কখনও কমলালেবুর মতো গোল চাঁদ দেখে একদল মানুষ ঠিক করল, এভাবেই বুঝি দিন-তারিখ মনে রাখা যায়। আবার অনেক দেশের লোকেরা তাদের দেবতাদের নাম দিয়ে দিন-তারিখ মনে রাখা শুরু করল।

তবে শুরুতেই কিন্তু সাত দিনের সপ্তাহ ছিল না। মিসরীয় সভ্যতা, ব্যাবিলনীয় সভ্যতা, গ্রিক, রোমান ও অ্যাংলো-স্যাক্সন জাতির মানুষেরা প্রথম সপ্তাহের নাম নিয়ে কাজ শুরু করে। সে সময় নামগুলো ঠিক করা হয় আকাশে দৃশ্যমান সাতটি উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক আর দেব-দেবীর নামে। কিন্তু মিসরে গ্রহ, চাঁদ আর সূর্যের নামে সাত দিনের নাম হলেও বর্তমানে ইংরেজি সাত দিনের নামগুলো অ্যাংলো-স্যাক্সনদের থেকেই নেওয়া হয়েছে। চলুন ছোট করে আমাদের সানডে-মানডে’র গল্পটা শুনে আসি।

সানডে বা রবিবার
গ্রিক পুরাণে সূর্য হচ্ছে দেবতা, আর স্যাক্সন ভাষায় তাকেই বলে হয় ‘Sunne’, যা থেকে ইংরেজিতে এসেছে ‘Sun’। সান মানে সূর্য। আর বাংলায় রবি মানেও সেই সূর্যমামাই। এই আমাদের রবিবার।

আগে চাঁদের চলাফেরা বা গতিবিধি দেখেই দিনক্ষণ ঠিক করত মানুষ। ছবি : সংগৃহীত

মানডে বা সোমবার
মানডে আসলে ছিল ‘মুনডে’। গ্রিক পুরাণে ‘Seleness’ চাঁদের দেবী। রোমান ভাষায় চাঁদকে বলা হয় Moon। ব্যস হয়ে গেল মানডে!

টিউসডে বা মঙ্গলবার
গ্রিক পুরাণে ‘Ares’ নামে এক দেবতা আছেন। রোমান ভাষায় তাকে বলা হয় Mars। Mars মানে কী বলো তো? মঙ্গলগ্রহ। কিন্তু স্যাক্সনদের ধর্মবিশ্বাস অনুযায়ী তাদের দেবতা হলেন ‘Tiu’। সেখান থেকেই ইংরেজি Tuesday মানে মঙ্গলবার।

ওয়েডনেসডে বা বুধবার
রোমান পুরাণ বলে, ব্যবসা-বাণিজ্যের দেবতা হচ্ছেন ‘Mercury’। আর এই মার্কারি আমাদের বুধ গ্রহ। তবে স্যাক্সনদের দেবী Woden-এর নাম থেকে এসেছে ‘Woden’s Day’ আর সেখান থেকে Wednesday।

থার্সডে বা বৃহস্পতিবার
অ্যাংলো-স্যাক্সনরা বিশ্বাস করে, থর হলেন থান্ডার বা বজ্রপাতের দেবতা। সেখান থেকে তারা নাম দিয়েছে ‘Thor’s day’ বা Thursday। আবার গ্রিক ভাষায় এই ‘বজ্রপাতের পিতা’ হচ্ছেন দেবতা জিউস। আর জিউস গ্রহকে আমরা চিনি রোমান পুরাণের ‘জুপিটার’ নামে। এই জুপিটার গ্রহই হচ্ছে আমাদের বৃহস্পতি গ্রহ।

বর্তমান ইংরেজি সাত দিনের নামগুলো অ্যাংলো-স্যাক্সনদের থেকেই নেওয়া হয়েছে। ছবি : সংগৃহীত

ফ্রাইডে বা শুক্রবার
অ্যাংলো-স্যাক্সনদের কাছে সৌন্দর্যের দেবী হলেন ফ্রিগ, সেখান থেকেই এসেছে ইংরেজি ফ্রাই ডে নাম। গ্রিক আফ্রোদিতি বা রোমান ভেনাস হচ্ছেন সৌন্দর্য ও প্রেমের দেবী। তার নামেই শুক্র গ্রহের নাম। এই সব মিলিয়েই আমাদের ফ্রাইডে আর শুক্রবার।

স্যাটারডে বা শনিবার
‘Saturn’ হলেন রোমান দেবতা। এই স্যাটার্ন থেকেই ইংরেজিতে এসেছে স্যাটারডে। স্যাটার্ন অথবা শনি গ্রহ থেকেই আমরা পেয়েছি শনিবার।

প্রতিদিনই দৈনন্দিন কাজে আমরা সপ্তাহের সাত দিনের নাম ব্যবহার করলেও কয়জনই বা এই নামগুলোর ইতিহাস জানি? ছোটবেলায় নামগুলো শুধু মুখস্থ করলেও বর্তমানে এর ইতিহাস জানাটাও বেশ জরুরি বটে।

সর্বাধিক পঠিত