
বর্তমানে যে সমস্ত কম্পিউটার ব্যবহার হচ্ছে, তা কিন্তু একদিনে তৈরি করা সম্ভব হয়নি। বহু দিনের চেষ্টা, সাধনা, উদ্ভাবনী শক্তি ও গবেষণার ফসল বর্তমানের এই কম্পিউটার।
কম্পিউটার তৈরির পেছনে রয়েছে অনেক বিজ্ঞানীর অক্লান্ত পরিশ্রম। বিশেষ করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকেই বিভিন্ন প্রকার বৈদ্যুতিক যন্ত্রের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে কম্পিউটার সিস্টেমেরও উন্নতি ঘটতে শুরু করে। বিভিন্ন পর্যায়ে এর ক্রমপরিবর্তন, উন্নয়ন, পরিবর্ধন ও বিকাশ লাভের পর কম্পিউটার বর্তমান অবস্থায় এসেছে। এই পরিবর্তনসমূহ প্রধানত ইলেকট্রনিক কৌশলের ওপর ভিত্তি করে হয়েছে। এই পরিবর্তন বা বিকাশের একেকটি ধাপকেই কম্পিউটার জেনারেশন বা কম্পিউটার প্রজন্ম বলা হয়।
প্রথম বিদ্যুৎ চালিত কম্পিউটার এনিয়াক থেকে শুরু করে বর্তমান সময় পর্যন্ত কম্পিউটার প্রযুক্তির যে উন্নতি হয়েছে, সেই সময়কালকে আমরা পাঁচটি প্রজন্ম বা জেনারেশনে ভাগ করতে পারি। যদিও সাল বা সময়কাল নিয়ে মতভেদ রয়েছে। চলুন, জেনে নিই সেগুলো সম্পর্কে—
প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটার
সাধারণত ১৯৪০ সাল থেকে ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত যে সমস্ত কম্পিউটার ব্যবহার করা হতো, সেই সমস্ত কম্পিউটারকে প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটার বলা হয়। প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটার; যেমন ইয়েন আইএসসি, ইদি এসএসসি, মার্ক ওয়ান ইত্যাদি।
বৈশিষ্ট্য
প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটারে ভ্যাকুয়াম টিউব ব্যবহার করা হতো। এটি প্রচুর তাপ উৎপাদন করত। এই প্রজন্মের কম্পিউটারগুলোর আকৃতিও ছিল সর্ববৃহৎ। এই কম্পিউটারগুলোর কাজ করার গতি ছিল অত্যন্ত ধীর। তথ্যের ভিত্তিতে ফল প্রকাশের ক্ষমতা ছিল অত্যন্ত নিম্নমানের। এই প্রজন্মের কম্পিউটারগুলো ছিল অত্যন্ত মূল্যবান।
দ্বিতীয় প্রজন্মের কম্পিউটার
সাধারণত ১৯৫৬ থেকে ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত সময়কালকে কম্পিউটারের দ্বিতীয় প্রজন্ম বলা হয়। ইন্টিগ্রেটেড সার্কিটের (আইসি) যথাযথ ব্যবহার, তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ, কম্পিউটারের আকার হ্রাস এবং নির্ভরযোগ্যতা ইত্যাদি সাফল্যে ভরপুর কম্পিউটারকে দ্বিতীয় প্রজন্মের কম্পিউটার বলা হয়। যেমন আইবিএম ১৬২০, আইবিএম ১৪০০ ইত্যাদি।
বৈশিষ্ট্য
দ্বিতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারে ট্রানজিস্টার ও ইন্টিগ্রেটেড সার্কিটের ব্যবহার করা হতো। কম্পিউটারের আকৃতি ও আয়তনের সংকোচন করা হয়। চুম্বকীয় কোর স্মৃতি ব্যবহার ও ম্যাগনেটিক ডিস্কের ব্যাপক ব্যবহার হয়ে থাকে দ্বিতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারে। ইনপুট ও আউটপুট ডিভাইসের উন্নয়নও করা হয়। উচ্চতর প্রোগামিং ভাষার উদ্ভব ও ব্যবহার করা হয়। কার্যসম্পাদনের গতির উন্নতি, টেলিফোন লাইন ব্যবহার করে ডেটা স্থানান্তরের ব্যবস্থা ও তাপমাত্রার সমস্যার সমাধান করা হয়।
তৃতীয় প্রজন্মের কম্পিউটার
সাধারণত ১৯৬৪ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত সময়কালকে কম্পিউটারের তৃতীয় প্রজন্ম বলা হয়। এ শ্রেণির কম্পিউটারে আউটপুট ডিভাইস হিসেবে ভিডিও প্রদর্শন ইউনিট ও উচ্চগতির প্রিন্টারের প্রচলন হয় এবং সেমিকন্ডাক্টর মেমোরি ব্যবহার করা হয়। এ প্রজন্মের আইবিএম ৩৬০ সিরিজে বিভিন্ন রকমের হার্ডডিস্ক ক্যাপাসিটিসহ প্রায় ছয় ধরনের কম্পিউটার বাজারজাত করা হয়েছিল। তৃতীয় প্রজন্মের কম্পিউটার; যেমন আইবিএম ৩৬০, আইবিএম ৩৭০ ইত্যাদি।
বৈশিষ্ট্য
তৃতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারে ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট আইসির ব্যাপক প্রচলন শুরু হয়েছিল। অর্ধপরিবাহী স্মৃতির উদ্ভব ও ব্যবহার শুরু হয়। প্রসেসিং স্পিডের ব্যাপক বৃদ্ধি ঘটে। মিনি কম্পিউটারের প্রচলন হয়। উচ্চতর ভাষার উন্নয়ন ও ব্যবহার হয়। ভিডিও ডিসপ্লে ইউনিট, লাইন প্রিন্টার ইত্যাদি আউটপুট ডিভাইস প্রচলন হয় এবং মাউসের ব্যবহার শুরু হয়।
চতুর্থ প্রজন্মের কম্পিউটার
১৯৭১ সাল থেকে চতুর্থ প্রজন্ম শুরু হয়েছে বলে মনে করা হয়, যা আজও বর্তমান। বড় স্কেল ইন্টিগ্রেশন এবং স্কেল ইন্টিগ্রেশন মাইক্রোপ্রসেসর ও সেমিকন্ডাক্টর মেমোরি দিয়ে এ প্রজন্মের কম্পিউটারগুলো তৈরি হয়। এ প্রজন্মেই বেল ল্যাবরেটরির দুজন কম্পিউটার বিজ্ঞানী কর্তৃক ইউনিক্স অপারেটিং সিস্টেম উদ্ভাবিত হয়। এই কম্পিউটারগুলোর মধ্যে রয়েছে আইবিএম ৩০৩৩, এইচপি ৩০০০ ইত্যাদি।
বৈশিষ্ট্য
মাইক্রোপ্রসেসরের উদ্ভব ও ব্যবহার, তথ্য ধারণক্ষমতার ব্যাপক উন্নতি, বিভিন্ন অপারেটিং সিস্টেমের ব্যবহার, অ্যাপ্লিকেশন প্রােগ্রামের ব্যবহার,
প্যাকেজ সফটওয়্যারের ব্যবহার, মাইক্রোকম্পিউটারের ব্যাপক প্রচলন, হাইপার থ্রেডিং প্রযুক্তির উদ্ভব ও প্রসেসরের গতি বৃদ্ধিতে ব্যবহার, প্যাকেজ প্রোগ্রামের প্রচলন, নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা চালু, ব্যাটারি দিয়ে চালানোর ক্ষমতা, উচ্চতর প্রোগ্রামিং ভাষার উন্নয়ন ইত্যাদি।
পঞ্চম প্রজন্মের কম্পিউটার
চতুর্থ ও পঞ্চম প্রজন্মের কম্পিউটারের মধ্যে বড় কোনও পার্থক্য পরিলক্ষিত হয় না। দিনে দিনে এর উন্নতি সাধন হচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও হতে থাকবে। এই প্রজন্মের কম্পিউটারগুলোতে প্রোগ্রামিং ভাষা ব্যবহার করা হয়। এই কম্পিউটারগুলোর মধ্যে রয়েছে ইটিএ-ডি২পি ইত্যাদি।
বৈশিষ্ট্য
অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবলের ব্যবহার করা হয়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা থাকায় যে কোনও বিষয় বিচার-বুদ্ধি করার ক্ষমতা, সুপার কম্পিউটারের প্রচলন ও ব্যবহার, খুবই দ্রুতগতি ও খুব বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন কম্পিউটার, শ্রবণযোগ্য ও অনুবাদযোগ্য ক্ষমতাসম্পন্ন কম্পিউটার ইত্যাদি।