
বাংলাদেশ-ভুটান ফুটবল ম্যাচে ঢাকার জাতীয় স্টেডিয়াম ছিল যেন কানায় কানায় পূর্ণ। হামজা, ফাহামিদুলদের দিনে বাংলার ফুটবল আরও একবার জেগে উঠার ঐতিহাসিক মূহুর্ত। স্মরণী মূহুর্তে জাতীয় দলের জার্সিতে মাঠ মাতালেন, এক সঙ্গে জাতীয় দলে খেললেন সিলেটের দুই ভাই। তারা এক সঙ্গে জাতীয় দলে খেলে গড়লেন অনন্য রেকর্ড। বাংলাদেশ ফুটবলের ইতিহাসে স্থাপন করলেন দৃষ্টান্ত। জাতীয় ফুটবল দলের হয়ে খেলা এই দুইজন যে শুধু সতীর্থ নন, তারা রক্তের বন্ধনেও জড়িত—আপন ভাই।
সিলেট নগরের উপকণ্ঠ দক্ষিণ সুরমার সাদ উদ্দিন ও তাজ উদ্দিন এক সঙ্গে খেললেন লাল-সবুজ জার্সিতে। দু’জনই বুক চিতিয়ে লড়াই করেছেন। প্রতিপক্ষের আক্রমণ ঠেকিয়েছেন। বাংলাদেশের জয়ে রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান।
সাদ উদ্দিন জাতীয় দলে আছেন অনেক দিন ধরে। রক্ষণের বাঁ পাশে তার জায়গা একরকম পাকা। আর তাজ উদ্দিন রক্ষণে ডান প্রান্তের নতুন যোদ্ধা—এই প্রথম জাতীয় দলের জার্সিতে খেলার সুযোগ পেয়েছেন। অভিষেক ম্যাচে দারুণ পারফরমেন্স করেছেন।
বুধবার (৪ জুন) জাতীয় স্টেডিয়ামে ভুটানের বিপক্ষে রক্ষণভাগের দুই প্রান্তে খেললেন দুই ভাই, যা নিয়ে সাদের আনন্দের শেষ নেই। ভাইয়ের খেলা নিয়ে সাদ আজ বললেন, ‘আমি তো জাতীয় দলে খেলছি অনেক দিন ধরে। কিন্তু তাজের সঙ্গে একই মাঠে, জাতীয় দলের জার্সি গায়ে খেলব—স্বপ্ন ছিল। সেটা অবশেষে পূরণ হয়েছে। আর এতে আমার পরিবারও খুব খুশি।’
সাদের তিন বছরের ছোট তাজ এর আগে গত বছর ঢাকায় মালদ্বীপের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচের ২৩ জনের স্কোয়াডে ছিলেন। কিন্তু খেলার সুযোগ মেলেনি। এ ছাড়া আরও দুবার জাতীয় দলের প্রাথমিক স্কোয়াডে ছিলেন।
এবার শুরুর একাদশে জায়গা পেয়েই তাজ দেখিয়ে দিলেন নিজের যোগ্যতা। ভাইকে নিয়ে সাদের মুখে মুগ্ধ উচ্চারণ, ‘ডেডিকেশনে সে অসাধারণ। রাইটব্যাক হিসেবে আক্রমণ আর রক্ষণ—দুটিতেই ভালো। ওর লিগ পারফরম্যান্স দারুণ ছিল। এ কারণেই কোচ ওকে শুধু দলেই নেননি, একাদশেও সুযোগ দিয়েছেন। আর ভুটান ম্যাচটাও খুব ভালো খেলেছে।’
দুই ভাইয়ের মধ্যে মিল অনেক—কিন্তু আলাদা আলাদাভাবে তৈরি হয়েছে তাদের নিজস্ব অবস্থান। তাজের সাম্প্রতিক লড়াইয়ের কথা কথাও উঠে এল সাদের মুখে, ‘দুই বছর ধরে ও নিজেকে প্রমাণ করার জন্য লড়েছে। শেখ জামালের সঙ্গে চুক্তি করেও খেলতে পারেনি গত মৌসুম। শেখ জামাল দল গড়েনি। শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে রহমতগঞ্জে যায়। আর সেখানেই সে লিগের সেরা রাইটব্যাক হয়ে উঠে আসে।’
জাতীয় দলে জায়গা পাওয়া ২৩ বছর বয়সী তাজের কাছে গর্বের মুহূর্ত। নিজেই বললেন, ‘এত তাড়াতাড়ি জাতীয় দলে খেলা হবে ভাবিনি। আর দুই ভাই একসঙ্গে খেলা বিরাট ব্যাপার। আগের দিন অনুশীলন সেশনেই একটু আন্দাজ পাই যে সুযোগ আসতে পারে। তখনই মানসিকভাবে তৈরি হই। ম্যাচের আগে দুপুরের পর টিম যখন ঘোষণা করে, তখন জানতে পারি। এর আগেই অবশ্য সহকারী কোচেরা তৈরি থাকতে বলেন।’
ভাইয়ের প্রতি তাজ অনেক কৃতজ্ঞ। বলেন, ‘ভাই অনেক সহায়তা করে। অনেক সাপোর্ট দিয়েছে। ম্যাচের আগে সবাই মোটিভেট করেছে। ম্যাচটা খেলে আমি খুশি। ম্যাচের পর কোচ বললেন, ভালো করেছ। সবাই অভিনন্দন জানিয়েছে। ড্রেসিংরুমে থাকতে থাকতেই আম্মাকে ফোন করেছি। তিনি খুব খুশি। বাবাও খুশি।’
তারা পাঁচ ভাই। সাদ দ্বিতীয়, তাজ তৃতীয়। সবার বড়জন সিলেটে একটা ফুটবল একাডেমি পরিচালনা করেন। সবার ছোটজনও ফুটবল খেলেন। বাবা জহির উদ্দিন পেশার চাকরিজীবী। ফুটবলপ্রেমী সাদ-তাজের পরিবারে এখন আনন্দের বন্যা। এ আনন্দ শুধু দুই ভাইয়ের নয়, এক পরিবারের নয়; এ আনন্দ বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমীদেরও।