২৯ অগাস্ট ২০২৫

ঝিনুক থেকে কীভাবে মুক্তা তৈরি হয়

কিশোর ডাইজেস্ট ডেস্ক
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৮:৩৯
কীভাবে ঝিনুকের গর্ভে মুক্তা তৈরি হয়? ছবি : সংগৃহীত

পৃথিবীর প্রায় সব মূল্যবান রত্নের সন্ধান মেলে মাটির নিচে­—হীরা বা চুনি-পান্না—সব। ব্যতিক্রম শুধু মুক্তা। ঝিনুকের মতো মলাস্কা পর্বের প্রাণির গর্ভে তৈরি হয় এই রত্নপাথর। অঙ্গসজ্জার বাহারি গহনা, প্রসাধন সামগ্রী এমনকি ওষুধ তৈরিতেও ব্যবহৃত হয় মুক্তা। ঠিক কীভাবে ঝিনুকের গর্ভে মুক্তা তৈরি হয়?  ঝিনুকের ভেতরে মুক্তা তৈরির প্রক্রিয়াটি জেনে আপনি অবাক হবেন।

সাগরে শামুকের বিভিন্ন প্রজাতি আছে। যার পেটে মুক্তা থাকে, কিন্তু তা থেকে কীভাবে মুক্তা উৎপন্ন হয়, তা জানেন না অনেকেই। শামুক নিজেকে রক্ষা করার জন্য একটি খুব শক্তিশালী খোসার মধ্যে বাস করে এবং এই খোলসটিকে ঝিনুক বলা হয়। যখন হাজার হাজারের মধ্যে একটি বা দুটি ঝিনুকের খোসার মধ্যে একটি ছিদ্র থাকে, তখন বালির কণা তার ভেতরে যায়। এমন অবস্থায় ঝিনুকের ভেতরে বালির কণাগুলোকে এক বিশেষ ধরনের পদার্থ প্রলেপ দিতে শুরু করে।

এই বিশেষ পদার্থটিকে ক্যালসিয়াম কার্বোনেট বলা হয় এবং এটি সেই জীবের ভেতরেই উৎপন্ন হয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটি একটি সাদা রঙের চকচকে গোলাকার আকৃতির পাথরে পরিণত হয়, যাকে মুক্তা বলে। ঝিনুকের অভ্যন্তরে থাকা বালির কণা যখন শামুকের মধ্যে বিক্রিয়া করে, তখন তা থেকে এক ধরনের তরল চর্বিযুক্ত পদার্থ বের হয়। মুক্তা গঠন একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া। সাধারণভাবে এমনটাই মনে করা হয়।

তবে ঝিনুকের পেটে মুক্তা তৈরি হওয়ার প্রক্রিয়া জানার জন্য আগে এর শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়াটি কিছুটা বুঝতে হবে। ঝিনুক বাইভালভিয়া শ্রেণির প্রাণি। এর অর্থ, এর খোসল দুই অংশে বিভক্ত। একটি স্থিতিস্থাপক লিগামেন্ট খোলসের দুই অংশকে একসঙ্গে ধরে রাখে। প্রয়োজন অনুসারে এই লিগামেন্টই ঝিনুকের খোসল খোলা ও বন্ধের কাজ করে। সাধারণত খাদ্য গ্রহণের সময় ঝিনুকের খোলসটি খোলা থাকে।

মুক্তা হচ্ছে ন্যাক্রে দ্বারা আচ্ছাদিত ঝিনুকের জন্য বহিরাগত একটি উপাদানের নাম। ছবি : গেটি ইমেজেস

ঝিনুকের গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ হচ্ছে ম্যান্টল। ঝিনুকের খাবার থেকে প্রয়োজনীয় খনিজ পদার্থগুলো সংশ্লেষ করে বিশেষ একধরনের তরল উৎপন্ন করে এটি। যাকে ন্যাক্রে বলা হয়। ন্যাক্রের মূল উপাদান আরাগোনাইট (কার্বোনেট খনিজ) এবং কনচিওলিন (প্রোটিন)। এই ন্যাক্রে থেকেই তৈরি হয় ঝিনুকের খোলস।

ঝিনুকের খোলস খোলা থাকা অবস্থায় কোন খাদ্যকণা, পরজীবী বা অন্য কোনও পদার্থ ঝিনুকের ম্যান্টলের মধ্য আটকা পড়লে মূলত মুক্তা তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়। আত্মরক্ষার খাতিরে ঝিনুকের ম্যান্টল কাজে লেগে পড়ে। অনাহুত সেই জিনিসকে ন্যাক্রে দিয়ে ঢেকে ফেলে। একসময় আচ্ছাদিত এই বস্তুটি পরিণত হয় মুক্তায়। অর্থাৎ, মুক্তা হচ্ছে ন্যাক্রে দ্বারা আচ্ছাদিত ঝিনুকের জন্য বহিরাগত একটি উপাদানের নাম।

সাদা, কালো, ধূসর, লাল, নীল এবং সবুজসহ বিভিন্ন রঙের মুক্তা দেখা যায়। ঝিনুকের খাদ্য উপাদান, এর প্রজাতি এবং পরিবেশের কারণে রঙের এমন তারতম্য হয়। বর্তমানে বেশির ভাগ মুক্তাই বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হয়। এসব ক্ষেত্রে মুক্তাচাষিরা ঝিনুকের ম্যান্টলের ভেতর খাদ্যকণা বা জৈববস্তু ঢুকিয়ে দেয়। এটা পরে মুক্তায় পরিণত হয়।

সর্বাধিক পঠিত