২৭ জুলাই ২০২৪

সন্তানের মনের খবর রাখছেন তো?

কিশোর ডাইজেস্ট ডেস্ক
০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৯:৩৮
সন্তানের মন ভালো রাখার দায়িত্ব অভিভাবকদেরই নিতে হবে। ছবি : ফ্রিপিক

আপনার সন্তান কি হঠাৎ খুব অমনোযোগী হয়ে উঠেছে? স্কুলের কাজ সময়মতো শেষ করতে পারছে না? খেলাধুলাতেও ওর মন নেই? হতে পারে পড়াশোনা বা খেলাধুলায় আরও ভালো করার চাপে সে মনোসংযোগ হারিয়ে ফেলছে। এতে তার আচরণেও পরিবর্তন আসে। কিন্তু নানা ব্যস্ততায় হয়তো বড়দের অনেক সময় সেই পরিবর্তন নজরে আসে না। এভাবে ধীরে ধীরে তার মানসিক চাপ বাড়তে থাকে।

মনোবিদেরা বলছেন, আগে বিষণ্ণতা বা মানসিক চাপের মতো ভারী শব্দগুলোর সঙ্গে মানুষ অতটা পরিচিত ছিল না। কিন্তু বর্তমানে কিশোর-কিশোরীদের মধ্যেও মানসিক অবসাদ লক্ষ করা যাচ্ছে। এর পেছনে কতগুলো কারণও রয়েছে।

দ্য ওয়ালের প্রতিবেদন জানাচ্ছে, বর্তমানে প্রতিযোগিতা অনেক বেড়ে গেছে, স্কুলে ও বাড়িতে সমানতালেই চাপ বাড়ছে বাচ্চাদের। ফলে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে স্ট্রেস বা মানসিক চাপ। আগে বাচ্চারা অনেক বেশি খেলাধুলা করত, কিন্তু এখন স্কুলের বাইরে একস্ট্রা-কারিকুলার অ্যাকটিভিটি এতটাই বেশি করতে হয় যে বন্ধুদের সঙ্গে মেলামেশা, খেলাধুলার সেই সময় নেই। ফলে বাচ্চাদের মধ্যেও একাকিত্ব বাড়ছে।

এখন বাচ্চারা অনেক বেশি ডিজিটাল মাধ্যমে অভ্যস্ত। সারা দিন ল্যাপটপ, মোবাইল ফোনে মুখ গুঁজে থাকায় প্রাপ্তবয়স্কদের অনেক ব্যাপার তাদের নখদর্পণে। ফলে কম বয়স থেকেই এমন অনেক বিষয় জেনে যাচ্ছে বাচ্চারা, যা তাদের জানার কথাই নয়। খাদ্যাভ্যাসেও বদল এসেছে। যখন-তখন খাওয়া, অপুষ্টিকর খাবার খাওয়ার ঝোঁকে ওজন বাড়ছে বাচ্চাদের। ফলে তাদের শরীরের পুষ্টির সঙ্গে সঙ্গে ব্রেইনের পুষ্টিতেও ঘাটতি থেকে যাচ্ছে।

সমীক্ষা বলছে, পাঁচ থেকে বারো বছরের শিশুদের মানসিক সমস্যা আগের চেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে। এই বয়সের বাচ্চাদের মধ্যে ওসিডি, ডিপ্রেশন, প্যানিক অ্যাটাক, বাইপোলার ডিজঅর্ডারের সমস্যা দেখা দিতে পারে নানা কারণে। স্কুলে হয়তো হেনস্তার শিকার হচ্ছে, বাড়ির পরিবেশ সুস্থ নয়, মা-বাবার মধ্যে সমস্যা, অতিরিক্ত সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার, যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়া ইত্যাদি।

তবে মানসিক সমস্যার পেছনে সব সময় যে সুনির্দিষ্ট কারণ থাকবে, এমনটা না-ও হতে পারে। বাড়ি, স্কুলে কোথাও কোনও সমস্যা নেই, তা-ও বাচ্চার মনখারাপ, এমনটাও হতে পারে।

সৃজনশীল কাজে সন্তানকে বেশি উৎসাহ দিতে হবে। ছবি : ফ্রিপিক

মানসিক রোগকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। কমন মেন্টাল ডিজঅর্ডার, সিরিয়াস মেন্টাল ডিজঅর্ডার। বাইপোলার ডিজঅর্ডার বা সিজোফ্রেনিয়া গুরুতর সমস্যা। এসব ক্ষেত্রে কাউন্সেলিং, থেরাপি, ওষুধ সবই প্রয়োজন। অন্যান্য ক্ষেত্রে সমস্যার গভীরতা এবং কারণ বুঝে চিকিৎসা পদ্ধতি ঠিক করতে হবে।

তবে তার আগে বাচ্চাদের মন ভালো রাখার দায়িত্ব অভিভাবকদেরই নিতে হবে। মানসিকতা, সন্তানের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে উৎসাহ এবং মানসিক চাপ কাটাতে সন্তানকে সাহায্য করতে হবে। মা-বাবাকে সন্তানের সঙ্গে সময় কাটাতে হবে। তাদের সঙ্গে খেলাধুলা করতে পারেন, ছবি আঁকতে পারেন বা উৎসাহ দিতে পারেন। সাধারণত ছোটরা এই কাজগুলোর মধ্য দিয়েই নিজের মনের ভাব ফুটিয়ে তোলে।

কোনও নেতিবাচক মন্তব্য, খারাপ কথা, অশালীন অঙ্গভঙ্গি বাচ্চাদের সামনে না করাই ভালো। বাচ্চারা দ্রুত শেখে সব। সন্তানের সামনে কখনও ঝগড়া করা যাবে না। পরিবারের কোনও ঝামেলা সন্তানকে বুঝতে দেওয়া যাবে না। এগুলো তাদের মানসিক স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলে।

সন্তানকে ডায়েরি লেখা বা সৃজনশীল কাজে বেশি উৎসাহ দিতে হবে। এতে তার মানসিক বিকাশ হবে। সৃজনশীল কাজে মনোযোগ বাড়লে আপনার সন্তান ডিভাইসের প্রতি বেশি আসক্ত হবে না। সন্তানের সঙ্গে মন খুলে কথা বলতে হবে। মনখারাপ হলে তার কারণ জানতে হবে। রেগে যাওয়া যাবে না বা গায়ে হাত তোলা যাবে না। এতে হিতে বিপরীত হবে। সন্তানকে বুঝিয়ে বলতে হবে এবং বন্ধুসুলভ আচরণ করতে হবে।