২৫ জুন ২০২৫

সন্তান কী করছে, খোঁজ রাখছেন তো?

তানজিনা তন্বী
২৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:৪৯
সন্তানের সঙ্গে ছোট থেকেই সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। প্রতীকী ছবি

আপনি কী ভাবছেন, কী করছেন—তার প্রভাব কিন্তু আপনার পরিবারের কিশোর বা তরুণ সদস্যের মনেও পড়ছে। স্কুলে-কলেজে কিশোর-কিশোরীরা নিজেদের মতো করে অনেকটা সময় কাটায়। বন্ধুদের সঙ্গে খেলাধুলা করে, ঘুরে বেড়ায়। এরপর আছে অনলাইন দুনিয়া। এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে আমাদের জীবনে অপরিহার্য জিনিসের তালিকায় ঢুকে পড়েছে ইন্টারনেট। সেখানে বড়রাই যেহেতু ভুল করে বসে, ছোটদের ভুল হওয়ার আশঙ্কা তো আরও বেশি। তাই সন্তান কী করছে, খোঁজ রাখছেন তো?

সন্তান কী করছে, কার সঙ্গে ঘুরছে, পাঠ্যবই পড়া ও সৃজনশীল কাজ ছাড়া আর কী কী সে করছে, তার খোঁজখবর তো নেওয়া চাই। তবে মনে রাখতে হবে, আপনার আচরণে সে যেন বিরক্ত না হয়। তার কাছে যেন মনে না হয় আপনি খবরদারি করছেন। বরং আপনি যে তার মঙ্গলের জন্যই পাশে আছেন বা খোঁজখবর নিচ্ছেন, এ আস্থা যেন তার থাকে। চলুন, কিছু বিষয় জেনে নেওয়া যাক—

নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে দেবেন না 
আপনার সন্তানকে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে দেবেন না। অভিভাবক হিসেবে এটি আপনার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। সন্তানের সঙ্গে ছোট থেকেই বিশ্বাসের সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। আপনার প্রতি যেন তার পূর্ণ আস্থা থাকে। তার মনের ভাব প্রকাশে বাধা দেবেন না। সন্তানের কথা মন দিয়ে শুনতে হবে। তাতে যে বিষয়টি আপনার অপছন্দ হলো, তা ভালো করে যুক্তি দিয়ে বোঝান। একবাক্যে উড়িয়ে দেবেন না। আর ভালোটা হলে তার প্রশংসা করুন। উৎসাহ দিন।

সন্তান যেন বুঝতে পারে মা-বাবার কাছে সে সুরক্ষিত। ছবি : সংগৃহীত

বাবা-মায়ের সম্পর্ক
বাবা-মায়ের মধ্যে কেমন সম্পর্ক, তাও কিন্তু সন্তানের ওপর প্রভাব পড়ে। মা-বাবার মধ্যে যদি ঝগড়া-বিবাদ লেগেই থাকে, তাহলে সন্তানের মানসিক গঠনে প্রভাব পড়বেই। সন্তান যেন বুঝতে পারে মা-বাবার কাছে সে সুরক্ষিত এবং পরিবারের সঙ্গে থাকলে আর কিছুর প্রয়োজন নেই। তাই সন্তানের সামনে নিজেদের দ্বন্দ্ব-অভিমান প্রকাশ করবেন না।

ভার্চুয়াল জীবন
প্রত্যেকেরই নিজস্ব জীবন আছে, নিজস্ব জীবনবোধ আছে। প্রযুক্তি-বিশ্বে থেকে ভার্চুয়াল জীবন থাকবে না, এমন নয়। আর সেটাকে এত নেতিবাচক করে দেখাও ঠিক নয়। তবে প্রযুক্তির ব্যবহারটা কেমন হচ্ছে, সেদিকে খেয়াল রাখা জরুরি। আপনি যদি ভার্চুয়াল জীবনে অতিরিক্ত আসক্ত হয়ে পড়েন, তাহলে আপনার সন্তানও আসক্ত হবে, এটাই স্বাভাবিক। ইন্টারনেটে পড়াশোনা তথা জানার ক্ষেত্র বিস্তৃত। তাই সন্তানকে এ বিশ্ব সম্পর্কে জানার ব্যাপারে আগ্রহী করে তুলুন।

মানসিক নৈকট্য
সন্তানের সাথে যেন আপনার মানসিক দূরত্ব গড়ে না ওঠে, সেদিকে খেয়াল রাখা জরুরি। আপনার সঙ্গে যে কোনও ব্যাপারে মতের অমিল হতে পারে, কিন্তু সেটার ব্যাপারে খবরদারি না করে বরং সহনশীল হয়ে বোঝানোর চেষ্টা করুন। এতে সে নিজের মত সম্পর্কে ধারণা পাবে। আপনার প্রতি আস্থাও বাড়বে।

সন্তানের চাওয়া-পাওয়া, আবদার মন দিয়ে শুনতে হবে। ছবি : সংগৃহীত

খোলা মনে কথা বলুন
সন্তানের সঙ্গে খোলা মনে কথা বলুন। তার চাওয়া-পাওয়া, আবদার মন দিয়ে শুনুন। নিজের সামর্থ্য সম্পর্কে জানান। তাতে সন্তান এমন আবদার করে বসবে না, যা দিতে আপনি অপারগ। বয়ঃসন্ধিকালে নানা পরিবর্তনের ভেতর দিয়ে যায় সন্তানেরা। এ সময় সে যদি কোনও সমস্যার মুখোমুখি হয়, তা খোলা মনে আলাপ করুন।

আপনি সন্তানের অভিভাবক, তাই আপনাকে যথেষ্ট সহনশীল হতে হবে। সন্তান যে সব সময় আপনার কথা শুনবে বা মেনে নেবে, এমনটা ভাববেন না। কিন্তু আপনার সঙ্গে যদি সন্তানের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকে, তাহলে সে খোলা মনে সব কথা বলবে। আর আপনিও তাকে বোঝানোর জন্য পর্যাপ্ত সময় পাবেন। কিন্তু সম্পর্কটা যদি ভীতির হয়, তাহলে মঙ্গলের উল্টোটা হবে। তাই আপনাকেই সচেতন হতে হবে বেশি।

সর্বাধিক পঠিত