২৭ জুলাই ২০২৪

দুই বিজ্ঞানীকে নিয়ে দুই চলচ্চিত্র, যা জীবনে অনুপ্রেরণা দেবে

তানজিনা হোসেন
১৫ মে ২০২৪, ১৮:৪৯
দুই বিজ্ঞানীকে নিয়ে দুই চলচ্চিত্র, যা জীবনে অনুপ্রেরণা দেবে। ছবি: সংগ্রহ

চলচ্চিত্র যেমন আমাদের আনন্দ দেয়, তেমনই আমাদের নতুন কিছু ভাবতে শেখায়, অনুপ্রেরণা জোগায়। দুই অদম্য বিজ্ঞানীকে নিয়ে নির্মিত হয়েছে দুই চলচ্চিত্র, চলচ্চিত্র দুটো যেন সন্ধান দেয় নতুন জীবনের। এ জীবন হার না মানার, জয়ী হওয়ার। নোবেলজয়ী বিখ্যাত মার্কিন গণিতবিদ জন ন্যাশের জীবন নিয়ে নির্মিত হয় ‘আ বিউটিফুল মাইন্ড’, বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিংয়ের জীবন নিয়ে নির্মিত হয় ‘দ্য থিওরি অব এভরিথিং’। এ লেখায় তুলে ধরা হলো দুই চলচ্চিত্রের উপর আলোকপাত। আগ্রহীরা চলচ্চিত্র দুটো দেখতে পারেন। উপলব্দি করতে পারেন দুই অমর বিজ্ঞানীর বিস্ময়কর জীবনকথা।    

২০০১ সালে মুক্তি পেয়েছিল ‘আ বিউটিফুল মাইন্ড’। বিখ্যাত মার্কিন গণিতবিদ জন ন্যাশের জীবন নিয়ে নির্মিত হয়েছিল এই চলচ্চিত্রটি। জন ন্যাশ নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন ১৯৯৪ সালে। অসাধারণ প্রতিভাবান এই গণিতবিদ ক্যারিয়ারের উত্তুঙ্গ সময়ে সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত হন। চলচ্চিত্রের শুরুতে আমরা দেখতে পাব, ১৯৪৭ সালে প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিতে সম্মানজনক কার্নেগি স্কলারশিপ নিয়ে পড়তে এসেছেন জন ন্যাশ। বন্ধুদের সঙ্গে দারুণ সময় কাটানো এই ন্যাশ ডাইনামিকসের ওপর একটা মৌলিক তত্ত্ব দাঁড় করেন। আর এই তত্ত্বের ওপর লেখা আর্টিকেলের জন্য আমন্ত্রিত হন এমআইটিতে। সমস্যা শুরু হয় এর পর থেকেই। এমআইটির জীবন খুবই বিরক্তিকর লাগত ন্যাশের। এখানেই তাঁর সঙ্গে পরিচয় হয় এক রহস্যমানব উইলিয়াম পার্চারের সঙ্গে। পার্চার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে কাজ করেন বলে জানা যায়। তবে গোটা চলচ্চিত্রে এই পার্চার চরিত্রটি বাস্তব নাকি কল্পনা, তা নিয়ে দর্শকদের একটা দ্বিধা রয়েই যায়। পার্চার জন ন্যাশকে এক জটিল প্যারানোয়া বা সন্দেহবাতিক করে তুলতে ভূমিকা রাখেন।

‘আ বিউটিফুল মাইন্ড’ চলচ্চিত্রের একটি দৃশ্যে অভিনেতা রাসেল ক্রো ।

এরই মধ্যে ন্যাশ শিক্ষকতা শুরু করেন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে, বিয়ে করেন এলিসিয়া নামে এক সুন্দরি ছাত্রীকে। সন্তানের পিতাও হন। কিন্তু পার্চার আর তথাকথিত সোভিয়েত ষড়যন্ত্র তাঁর পিছু ছাড়ে না কখনোই। দিন দিন অসুস্থ আর বিকারগ্রস্থ হয়ে পড়েন জন ন্যাশ। মনোবিদ ডা. রোজেন আবিস্কার করেন, আসলে পার্চার বলে কারও অস্তিত্ব নেই, তার অস্তিত্ব কেবল ন্যাশের মনে। এই প্যারোনোয়ার চিকিৎসা করতে গিয়ে আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়তে থাকেন ন্যাশ। অসুস্থতার চরম পর্যায়ে ন্যাশ এক সময় স্ত্রী সন্তানকে পর্যন্ত খুন করতে উদ্যত হয়েছিলেন। কিন্তু এলিসিয়া কখনো তাকে ছেড়ে যাননি। এই জটিল মানসিক রোগের সাথে লড়াই করে অবশেষে জন ন্যাশ আবার গবেষণা আর শিক্ষকতায় ফিরে আসেন। তারপর দুই দশক ধরে নিরবিচ্ছিন্ন গবেষণার পর এক সময় সফলতার মুখ দেখেন। তিনি প্রিন্সটনের গণিত বিভাগের প্রধান হন। পান নোবেল পুরস্কারও। আর পুরস্কারটি উৎসর্গ করেন প্রিয়তমা স্ত্রী এলিসিয়াকে।

বাস্তব আর অবাস্তব, সত্য আর কল্পনার দৃশ্যকল্পের মিশেলে অসাধারণ চলচ্চিত্রায়ণ ‘আ বিউটিফুল মাইন্ড’। মানুষের মনের জটিল গতিপথ, বিশ্বাস অবিশ্বাসের দোলাচল আর মনোবিকারের সাথে এক প্রতিভাবানের অন্তহীন লড়াইয়ের গল্প এটি। ২০০১ সালে মুক্তি পাওয়ার পরই সাড়া ফেলে দিয়েছিল সিনেমাটি, জিতে নিয়েছিল চারটি একাডেমি পুরস্কার। রাসেল ক্রো অভিনয় করেন এর মুখ্য চরিত্রে।

দ্য থিওরি অব এভরিথিং’ চলচ্চিত্রে স্টিভেনের ভূমিকায় এডি রেডমেইন এবং তার স্ত্রী জেনের ভূমিকায় ফেলিসিটি জোন্স।

২০১৪ সালে মুক্তি পায় ‘দ্য থিওরি অব এভরিথিং’। এটি আমাদের সবার চেনাজানা বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং এর জীবন নিয়ে নির্মিত। তাত্ত্বিক পদার্থবিদ স্টিফেন হকিং মটর নিউরন ডিজিজে আক্রান্ত হন অল্প বয়সে। চিকিৎসকরা বলেছিলেন, তিনি মাত্র দুই বছর বাঁচবেন। এই আশঙ্কাকে উড়িয়ে দিয়েই জেন ওয়াইল্ড ভালবেসে তাকে বিয়ে করেন আর তাঁর সন্তানের জননী হন। চলচ্চিত্রটি আসলে জেনের সাথে স্টিফেন হকিংয়ের এক আশ্চর্য দাম্পত্য জীবন আর প্রেমকে উপজীব্য করে তৈরি হয়েছে। যে জীবনে অসাধারণ প্রতিভাবান এক বিজ্ঞানী শারীরিকভাবে একেবারেই অথর্ব, কিন্তু বিশ্বকে একের পর উপহার দিয়ে চলেছেন বিস্ময়। ‘দ্য থিওরি অব এভরিথিং’ একাধিক একাডেমি পুরস্কার, গোল্ডেন গ্লোব অ্যাওয়ার্ড, স্ক্রিন একটরস গিল্ড অ্যাওয়ার্ড সহ অনেক পুরস্কারে মনোনীত হয়। এডি রেডমাইন সেরা অভিনেতার প্রায় সবগুলো পুরস্কার ঝুলিতে ভরেন সে বছর।

‘আ বিউটিফুল মাইন্ড’-এ মানসিক বিকারের সাথে জন ন্যাশের আর ‘দ্য থিওরি অব এভরিথিং’-এ শারীরিক অক্ষমতার সাথে বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিংয়ের জীবনভর যন্ত্রণাদায়ক লড়াই কাহিনি তুলে ধরা হয়েছে। আর সেই সব লড়াইয়ে জয়ী হওয়ার মানবিক গল্প মানুষের পরাজিত না হওয়ার প্রেরণা জোগায়।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্টিফেন হকিংয়ের সেই বিখ্যাত বক্তৃতার বিখ্যাত উক্তি-‘হোয়াইল দেয়ারস লাইফ, দেয়ারস হোপ’- এই কথারই যেন প্রতিধ্বনি এই দুটি চলচ্চিত্র জুড়ে। বিজ্ঞানীদের জীবন নিয়ে যারা আগ্রহী তারা দেখে ফেলতে পারেন সিনেমা দুটি অবসর পেলেই।