২৯ জুন ২০২৫

যে ৮টি ধাপে ভুল থেকে শিক্ষা নিতে পারো

আফনান হিল্লোল
১৭ জানুয়ারি ২০২৪, ১৬:২৪
আমরা জেনে বা না জেনে, বোঝে বা না বোঝে অনেক সময় অনেক ভুল করি। ছবি: ফোর্বস

জীবনের খুবই স্বাভাবিক একটি বিষয় ‘ভুল’। আমরা জেনে বা না জেনে, বুঝে বা না বুঝে অনেক সময় অনেক ভুল করি। এটা খারাপ কিছু নয়, স্বাভাবিক। কিন্তু সমস্যাটি তখনই হয়, যখন আমরা ওই ভুল থেকে শিক্ষা না নিই।

পৃথিবীতে যত সফল মানুষ আছেন বা ছিলেন সবার মধ্যে কিছু মিল আছে। সেগুলোর মাঝে একটি হল ভুল থেকে শিক্ষা নেওয়া। কেউই ১০০% সঠিক থাকে না সব সময়। ভুল মানুষের হবেই। যারা ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারবে, তারাই সফলতার দিকে এগিয়ে যেতে পারবে।

আমরা বেশির ভাগ সময়েই কোনও ভুল করলে সেটা অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করি। এর ফলে অন্যদের চোখে আমাদের সম্পর্কে খারাপ ধারণার সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া যখন আমরা আমাদের দোষ অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করি, তখন আমরা কোনও না কোনও গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হই। কিন্তু যদি আমরা সেই দোষ মেনে নিয়ে তা থেকে শেখার চেষ্টা করতাম, তাহলে হয়তো পরবর্তীতে সেই ভুল এড়িয়ে চলার উপায় শিখতে পারতাম। চলো দেখে আসি কীভাবে আমরা আমাদের ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নিতে পারি।

১. ভুল স্বীকার করে নিতে শেখো
ভুল থেকে শেখার জন্য আমাদের নিজেদের ভুলগুলোকে স্বীকার করে নিতে শিখতে হবে। কোনও ভুল করলে তা স্বীকার করা এবং সেই ভুলের ফল ভোগ করার মধ্য দিয়েই আমাদের মনে দ্বিতীয়বার ভুল না করার ইচ্ছা জেগে ওঠে। যদি আমরা সেই ভুল অন্যের ঘাড়ে চাপাতে পারি, তাহলে আর সেটা থেকে শিক্ষা নেওয়ার ইচ্ছা থাকে না। কারণ তখন আমাদের মনে হয় যে পরের বারও এমন হলে অন্য কারও ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া যাবে। তাই যদি তুমি কোনও ভুল থেকে শিক্ষা নিতে চাও তাহলে সেই ভুলটা নিজেকেই স্বীকার করে নিতে হবে।

২. ভুলটাকে স্বাভাবিকভাবে নাও
ভুল মানুষের হতেই পারে। তুমিও ভুল করতেই পার। তাই ভুলটাকে স্বাভাবিকভাবে নাও। নিজেকে দোষী ভেবো না। যদি কোনও ভুলের জন্য নিজেকে দোষী ভাবা শুরু করো, তাহলে দেখবে আরও হতাশ হয়ে পড়বে এবং সেটা থেকে কিছু শিখতে পারবে না। এর চেয়ে বরং ভুল করাটাই স্বাভাবিক মেনে নিয়ে মনস্থির করবে তা থেকে কিছু শেখার জন্য। তাহলেই দেখবে হতাশ হচ্ছো না, বরং কিছু শিখতে পারছ।

৩. কারণ খুঁজে বের করো
ভুলটা নিয়ে খুব বেশি হতাশ না হয়ে তোমাকে সেই ভুলের কারণটা খুঁজে বের করতে হবে। কারণ খুঁজে বের করা হচ্ছে ভুল থেকে শেখার প্রথম পদক্ষেপ। তাই সময় নিয়ে ভাবো কোন কাজটার জন্য এই ভুলটি হল। মাঝে মাঝে দেখা যায় ছোট ছোট অভ্যাসের কারণে কোনও ভুল হতে পারে। তাই নিজের কাজের পাশাপাশি অভ্যাসগুলোকেও পরীক্ষা করে দেখবে। যদি প্রয়োজন হয় তো কোনও খাতায় বা ডায়েরিতে কারণগুলো লিখে রাখবে। কখনও কোনও কিছুর জন্য নিজেকে নির্দোষ ভেবো না। খুব ছোট ছোট ভুল করে থাকলেও সেটা তোমারই ভুল, তার জন্য তোমার দোষ আছে। অনেক সময় আমরা ছোট ছোট ভুল এড়িয়ে যাই এই বলে যে ওটা কোন ভুল না। যার ফলে সেই একই ভুল আবার হতে পারে। তাই ভুলগুলো বা কারণগুলো যত ছোটই হোক না কেন, এড়িয়ে যাওয়া চলবে না। সেগুলোর দিকেও আলাদা আলাদা করে নজর দিতে হবে এবং শুধরে নিতে হবে। তাহলেই তোমার চেষ্টা ফলপ্রসূ হবে।

৪. নিন্দুককে ঘৃণা করো না
আমাদের চারপাশের মানুষ আমাদের সম্পর্কে অনেক কথা বলে, তাই না? এগুলোকে পজিটিভলি নাও। মানুষের কথা থেকেই খুঁজে বের করো তোমার কী কী ভুল হচ্ছে। কবি তো এমনি এমনি বলেননি যে তিনি নিন্দুককে সবার চেয়ে বেশি ভালোবাসেন। আসলে নিন্দুকরা আমাদের ভুল শুধরে নেয়ার একটা বড় সুযোগ দেয় যা তারা নিজেও জানে না। নিজের সম্পর্কে আমরা অনেক কিছুই এড়িয়ে যাই যা আমাদের নিন্দুকরা এড়িয়ে যায় না। তাই যদি কেউ তোমার সম্পর্কে কোনও খারাপ কথা বলে, সেটা এড়িয়ে না গিয়ে একটু ভাবো আসলেই তোমার কোন ভুল আছে কিনা।

৫. শুধরানোর উপায় খুঁজে বের করো
ভুলগুলো চোখে পড়ার পর তোমার সেই ভুল শুধরানোর উপায় খুঁজে বের করতে হবে। সেজন্য তোমাকে যা করতে হবে তা হলো একটু ফ্লাশব্যাকে চলে যাওয়া। মাথা ঠান্ডা করে ভাবো ওই ভুলটা করার সময় ওই ভুল কাজটা করা ছাড়া তোমার অন্য কিছু করার ছিল কিনা। যদি থাকে তাহলে সেই কাজটা করলে সেটার ফলাফল কি হতে পারত। এভাবে ভাবতে ভাবতে তুমি এমন একটা পথ পেয়ে যাবে যেটা করলে ওই ভুলটা হত না। নিজে যেই ভুলগুলো করি তা থেকে শেখার পাশাপাশি আমরা অন্যের ভুল দেখেও শিখতে পারি

৬. ভেবে কাজ করো
যদি একই ভুল বারবার করা থেকে বাঁচতে চাও তাহলে উপরের ধাপটির মত তা শুধরানোর উপায় খুঁজে বের করে রাখ। পরেরবার একই অবস্থার সম্মুখীন হলে ভেবেচিন্তে সেই উপায় অবলম্বন করে চলতে পারলে হয়তো সেই ভুল আর হবে না। আর তাছাড়া কোনও কাজ করার আগে অবশ্যই ভেবে নিবে কাজটি ভুল নাকি সঠিক। তাহলেই দেখবে তোমার ভুলের পরিমাণ ধীরে ধীরে কমতে থাকবে।

৭. পরামর্শ নিতে জড়তা বোধ করো না
যদি তোমার মনে হয় কোনও কিছু ভুল করেছ এবং নিজে ভেবে তা শুধরানোর উপায় বের করতে পারছ না, তাহলে অন্য কারও কাছ থেকে পরামর্শ নিতে পারো। বাবা-মা, বড় ভাই বা বোনের কাছ থেকে পরামর্শ নিতে পার। এ ছাড়া পরিচিত এমন কেউ যাকে তুমি বিশ্বাস করতে পারো, তার কাছ থেকে পরামর্শ নিতে পার। সে হতে পারে বন্ধু বা সহপাঠী, হতে পারে কোনও বড় ভাই। অন্যের ভালো পরামর্শ তোমাকে ভুল থেকে শিক্ষা নিতে সাহায্য করবে।

৮. অন্যের ভুল দেখেও শেখো
নিজে যে ভুলগুলো করি তা থেকে শেখার পাশাপাশি আমরা অন্যের ভুল দেখেও শিখতে পারি। এর ফলে আমাদের শেখাটা আরও কার্যকরী হবে। যখন কাউকে ভুল করতে দেখবে, তখন ভেবে দেখবে তুমি তার জায়গায় থাকলে কী করতে, কীভাবে তুমি সেই ভুলটিকে এড়িয়ে যেতে পারতে। এভাবে তুমি অন্যের ভুল থেকেও শিখতে পারবে।

ভুল থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা কিছু বড় বড় ভুল থেকে বাঁচিয়ে রেখে আমাদের জীবনকে আরও সুন্দর করে তোলে। তাই চেষ্টা করবে নিজের ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নেওয়ার পাশাপাশি আশেপাশের মানুষের ভুল থেকেও শিক্ষা নেওয়ার। তাহলেই সফলতার পথে আরও এক ধাপ এগিয়ে যেতে পারবে।

সর্বাধিক পঠিত