০১ জুন ২০২৫

যে কারণে প্লেনে পাইলট ও কো-পাইলটের খাবার আলাদা হয়

মো. জান্নাতুল নাঈম
১৫ মে ২০২৫, ০৫:৫৮
পাইলট ও কো-পাইলট সম্পর্কে জানার আগ্রহ অনেকের সংগৃহীত

অনেকে আকাশে উড়তে চান, পাইলট হতে চান, চালাতে চান প্লেন। তাঁদের জীবনযাপন নিয়ে আগ্রহ আছে অনেকেরই। একটা মজার বিষয় হচ্ছে, বিমানের পাইলট ও কো-পাইলটের খাবারের মেন্যু আলাদা হয়। পাইলট যা খান, কো-পাইলট তা খান না, কিংবা নিয়ম অনুসারে খেতে পারেন না। অনেকেই ভাবতে পারেন, বিমানের সর্বাধিনায়ক পাইলট। তাই তার খাবার ভালো মানের, আলাদা। কিন্তু বিষয়টি তা নয়।

প্লেনের পাইলট ও কো–পাইলটের খাবারের পদ আলাদা কেন হয়? উত্তর জানতে হলে একটু পেছন ফিরে তাকাতে হবে।

১৯৮২ সালের আগস্ট। পর্তুগালের লিসবন শহর থেকে একটি প্লেন যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন শহরের উদ্দেশে রওনা হয়। আকাশে ওড়ার কিছু সময় পরই ঝামেলার সূত্রপাত। প্লেনটির ১০ জনের মধ্যে ৮ জন সদস্যই অসুস্থ হতে শুরু করেন। ধারণা করা হয়, নষ্ট ট্যাপিওকা পুডিং খাওয়ার পরই পেটব্যথা ও পেশিতে টান লাগে তাঁদের।

প্রতিবেদন অনুসারে, খাদ্যে বিষক্রিয়ার ফলেই এ ঘটনা ঘটেছিল। তবে ভাগ্য সুপ্রসন্ন, এই মিষ্টান্ন না খাওয়ায় কো-পাইলট ছিলেন সুস্থ। তাই প্লেনটির যাত্রীরা বড় কোনো বিপদে পড়েননি। এ রকম ঘটনা হরহামেশা ঘটে না। তাই বলে সাবধানতায় ফাঁকফোকর রাখা চলে না। ওই ঘটনার পর থেকে অনেক এয়ারলাইনস কোম্পানি প্লেনের ক্রুদের খাবারের ব্যাপারে খুব সতর্ক হতে শুরু করে।

উড়াল দেওয়ার পর পাইলটরা আদতে কী খান? এ ব্যাপারে কথা বলেছেন বাণিজ্যিক প্লেনের সাবেক পাইলট ও ‘ল্যান্ডিং ইন লাস ভেগাস: কমার্শিয়াল অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড দ্য মেকিং অব আ ট্যুরিস্ট সিটি’ বইয়ের লেখক ড্যান বাব।

বিশ্বজুড়ে উড়োজাহাজশিল্পের একটি সাধারণ রীতি হলো, প্লেন পরিচালনার দায়িত্বে থাকা পাইলটরা একই খাবার খান না। নিরাপত্তাই এর অন্যতম কারণ। লাস ভেগাসের নেভাডা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক বুঝিয়ে বলেন, পাইলট ও কো-পাইলট (ফার্স্ট অফিসার) ভিন্ন খাবার খান। কারণ, সর্বোচ্চ সতর্কতা হিসেবে একজনের কিছু হলেও অন্যজন যাতে নিরাপদে প্লেন অবতরণ করাতে পারেন, তাই এটা করা হয়।

এমনকি প্লেনে থাকা দুজন পাইলট যদি একই খাবারের ফরমাশ দেনও, তখন পাইলটকেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হয়। তিনি ঠিক করে দেন, কে কী খাবেন, কখন খাবেন। বাব আরও বলেন, যাত্রীবাহী প্লেনে পাইলটের কথাই শেষ কথা। তিনিই সর্বেসর্বা। ফলে যাত্রী ও ক্রুদের নিরাপত্তা বিঘ্নের মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে তার দায়ভারও তাঁকে নিতে হয়।

শর্ট ফ্লাইটেও কি একই নিয়ম
ফ্লাইটের সময়সীমা ৪৫ মিনিট হোক বা ১২ ঘণ্টা, খাবারের এই নিয়ম সব ক্ষেত্রেই এক। তবে কম সময়ের ফ্লাইটে অনেক সময় খাবারের সুবিধা না–ও থাকতে পারে। সে ক্ষেত্রে পাইলট নিজের খাবার নিজেই নিয়ে আসেন। কিন্তু নিজে নিয়ে এলেও মূল নিয়মের বদল হয় না। এ ক্ষেত্রেও পাইলট ও কো–পাইলটের খাবার মিলে গেলে চলবে না।

পাইলটরা কি আদতে সচেতন
সাধারণ ছুটির সময়, অর্থাৎ দায়িত্বের বাইরে পাইলটরা নিজেদের ইচ্ছামতো খেতে পারেন। তবে অনেকে এ সময়েও খাবার বাছাই নিয়ে থাকেন সতর্ক। বাব বলেন, পাইলটরা যখন প্লেনে থাকেন না, তখনো তাঁদের খাবারের ধরন মাথায় রাখতে হয়। যদি একজনের খাদ্যে বিষক্রিয়া হয় এবং তিনি অসুস্থতার কারণে প্লেন ওড়াতে না পারেন বা ছুটি নিতে হয়, তখন তাঁর পরিবর্তে আরেকজন পাইলট দায়িত্ব পালন করতে আসেন।

কেবিন ক্রুরা কি একই নিয়ম মানেন
পাইলটদের মতো এত নিয়মকানুনের মারপ্যাঁচ কেবিন ক্রুদের ক্ষেত্রে নেই। কিন্তু পাইলটরা যা খান, কেবিন ক্রুরা তা খান না। এটা অবশ্য এয়ারলাইনের সঙ্গে চুক্তির ওপর নির্ভর করে। কিন্তু বাসা থেকে নিজেদের খাবার আনার সুযোগ ক্রুদের আছে। অথবা ক্যাটারিংয়ের তৈরি খাবার অতিরিক্ত হলে তাঁরা খেতে পারেন। তবে তাঁদের খাবার প্লেনের সাধারণ যাত্রীদের মতোও নয়। একটি এয়ারলাইনের মুখপাত্র ডেইলি টেলিগ্রাফকে বলেন, দীর্ঘ সময়ের ফ্লাইটে কেবিন ক্রুরা সাধারণত ফ্লাইটের বিজনেস ক্লাসের যাত্রীদের খাবার খান। তবে পাইলট ও কো–পাইলটরা আবার ক্রুদের খাবার খান না।

সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট

সর্বাধিক পঠিত