২৭ জুলাই ২০২৪

আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করতে হয় যেভাবে

কিশোর ডাইজেস্ট ডেস্ক
১৮ মে ২০২৪, ১৯:৩৯
অনেকেই কোনো ভুল করার পরে সহজে ক্ষমা চাইতে পারেন না। ছবি: প্রতীকী

অনেকেই কোনো ভুল করার পরে সহজে ক্ষমা চাইতে পারেন না। কেউ কেউ আবার মুখে ক্ষমা চাইলেও উপলব্ধির মাধ্যমে সেটা ফুটে ওঠে না। তাই নিজের ভুল বুঝতে পারলে এবং আর আন্তরিকভাবে ক্ষমা চাওয়ার ক্ষেত্রে বাক্য ও শব্দ চয়ন এবং সঠিক স্বরভঙ্গি সম্পর্কে ধারণা রাখা প্রয়োজন।

যদিও কেউ নিজেকে ভুল প্রমাণ করতে পছন্দ করেন না। তবে যে কোনো ক্ষেত্রেই সঠিকভাবে ক্ষমা চাওয়া দীর্ঘ মেয়াদে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে সহায়ক। তাই যদি কখনও ক্ষমা চাওয়ার প্রয়োজন হয় তাহলে সচেতনভাবে আন্তরিকতার সাথেই সেটা করা উচিত।

ভালোভাবে দুঃখ প্রকাশ করা আসলে কি?
সচেতন বা অবচেতন যে কোনোভাবেই হোক অন্যের ক্ষতি করা বা আঘাত দেওয়ার পরে ‘দুঃখিত’ বলার কাজটাই হলো ভালোভাবে ক্ষমা চাওয়া দুঃখ প্রকাশ করা, হেল্থশটস ডটকম’ ম্যাগাজিনে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এভাবেই ব্যাখ্যা করেন ভারতীয় মনোবিজ্ঞানি আনু গোয়েল।

কোনো সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ক্ষমা চাওয়া গুরুত্বপূর্ণ। কারণ যার কাছে ক্ষমা চাওয়া হচ্ছে সে একই স্থানে অবস্থান করছেন। ‘ক্ষমা বা দুঃখ প্রকাশ অবশ্যই আন্তরিকতার সাথে চাওয়া উচিত। অন্যথায়, এর উদ্দেশ্য নষ্ট হয়’ বলেন অনু গোয়েল।

‘নেগোসিয়েশন অ্যান্ড কনফ্লিক্ট ম্যানেজমেন্ট রিসার্চ জার্নাল’ প্রকাশিত গবেষণা অনুসারে ভালোভাবে ক্ষমা চাওয়ার সাথে ছয়টি বিষয় সম্পর্কিত। যেমন, অনুশোচনা, প্রকাশভঙ্গি, কী ভুল হয়েছে তা ব্যাখ্যা করা, দায়িত্ব গ্রহণ, সংশোধনের চেষ্টা এবং ক্ষমা প্রার্থনা করা। এসব বিষয় একত্রে ক্ষমা চাওয়া বা দুঃখ প্রকাশের প্রক্রিয়াকে ফলপ্রসু করে। ভুলের মাফ চাওয়ার সময় কিছু বিষয়ের প্রতি খেয়াল রাখতে হয়।

ভুল স্বীকার করা
এটা ক্ষমা চাওয়ার প্রথম ধাপ। ‘স্পষ্টভাবে নিজের ভুল স্বীকার করতে হবে। যার কাছে ক্ষমা চাওয়া হচ্ছে সে যদি বুঝতে পারে নিজের ভুল সম্পর্কে জানেন তাহলে অর্ধেক কাজ সমাধান হয়ে যায়’ বলেন অনু গোয়েল।

ঘটনা ব্যাখ্যা করা
একবার ভুল স্বীকার করে নেওয়ার পরে আসে ঘটনার ব্যাখ্যা দেওয়ার পর্ব। কী ঘটেছে সেটা ব্যাখ্যা করার সময় অজুহাত না দেখানোই ভালো। ‘কখনও কখনও এটা বলাই ভালো যে, আমার কোনো অজুহাত নেই’ বলেন অনু গোয়েল। ‘কারেন্ট ডিরেকশন্স ইন সাইকোলজিকাল সায়েন্স’ প্রকাশিত সমীক্ষায় দেখা গেছে, নম্রতা ও ক্ষমা চাওয়ার মাঝে সম্পর্ক রয়েছে। বুদ্ধিবৃত্তিক নম্রতা বা বিনয়ী স্বভাব ক্ষমা চাওয়ার পথ সুগম করে।

অনুশোচনা প্রকাশ
ক্ষমা চাওয়ার ক্ষেত্রে অনুশোচনার প্রকাশ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অনু গোয়েল বলেন, ‘নিজের কাজের জন্য লজ্জিতবোধ করলে খোলামেলা ও সততার সাথে কথা বলা উচিত।’ ‘মোটিভেশন অ্যান্ড ইমোশন জার্নাল’ প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা যায়, অন্যরা নেতিবাচক অনুভূতির চেয়ে বরং অনুশোচনাকে বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকেন।

দায়িত্ব নেওয়া
পরিবেশ বা আশপাশের মানুষকে দোষারোপ না করে বরং নিজে সব দায়িত্ব নেওয়া উচিত। ‘দায়িত্ব নেওয়া জরুরি। সচেতনভাবে নিজের ভুল স্বীকার করতে হবে। অন্যের ওপর দোষারোপ করা যাবে না’ বলেন অনু গোয়েল। ‘পার্সোনালিটি অ্যান্ড সোশাল সাইকোলজি বুলেটিন’ প্রকাশিত এক গবেষণা অনুযায়ী, নিজের ক্রিয়াকলাপের দায়িত্ব নেওয়ার সময় আত্ম সহানুভূতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখানে এমন একটা শৃংখলা আছে যা আত্ম সহানুভূতি থেকে শুরু হয় এবং ভুল স্বীকারের দিকের ধাবিত হয়।

সংশোধন করা
ক্ষমা চাওয়ার পরে কীভাবে নিজের ভুল সংশোধন করা যায় সে সম্পর্কে অবশ্যই কথা বলতে হবে। পরিস্থিতি কীভাবে সংশোধন করতে পারেন এই বিষয়েও কথা বলা জরুরি। ‘এটি সম্পর্ক তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যদি কারও গাড়ির ক্ষতি করে থাকেন সেক্ষেত্রে সেটা ঠিক করে দেওয়ার প্রস্তাব দিতে পারেন। এই ধরনের বিষয়গুলো ক্ষমার অনুভুতিকে উৎসাহিত করতে পারে’ বলেন অনু গোয়েল। ‘ফ্রন্টিয়ার্স সাইকোলজি’ প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ক্ষমা চাওয়া এবং পুনরায় সেটা প্রতিষ্ঠা করা সহানুভূতির পাশাপাশি ক্ষমা করতেও সহায়তা করে।

মন থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করা
এটা ক্ষমা চাওয়ার চূড়ান্ত ধাপ। ক্ষমা চাইতে হবে মন থেকে। ‘নিজের ব্যাখ্যা অনুযায়ী ক্ষমা করা হবে এমনটা ধরে নেবেন না’ বলেন অনু গোয়েল। ক্ষমা পেতে ধৈর্য ধরতে হবে। কারণ এর জন্য যথেষ্ট সময়ের প্রয়োজন হয়।