২৭ জুলাই ২০২৪

জুমার দিনের মর্যাদা ও ফজিলত

জোবাইদুল ইসলাম
২৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:৪৯
জুমার দিন সপ্তাহের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিন। প্রতীকী ছবি

জুমার দিন সপ্তাহের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিন। এই দিনের প্রভূত মর্যাদা ও ফজিলত পবিত্র কুরআন ও হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, যে কারণে দিনটি এত বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত এবং ফজিলতপূর্ণ। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ তাআ’লা ইরশাদ করেছেন, ‘হে মুমিনগণ! জুমার দিন যখন সালাতের জন্য আহ্বান করা হয় তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে ধাবিত হও এবং ক্রয়-বিক্রয় ত্যাগ করো; এটাই তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা উপলদ্ধি করো।’ (সুরা জুমুআ’ : ৯)

জুমার দিনে গোসল সেরে আগে আগে মসজিদে যাওয়ার ফজিলত সম্পর্কে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, আল্লাহর রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন জানাবাত গোসলের ন্যায় গোসল করে এবং সালাতের জন্য আগমন করে সে যেন একটি উট কুরবানি করল। যে ব্যক্তি দ্বিতীয় পর্যায়ে আগমন করে সে যেন একটি গাভী কুরবানি করল। তৃতীয় পর্যায়ে যে আগমন করে সে যেন একটি শিং বিশিষ্ট দুম্বা কুরবানি করল। চতুর্থ পর্যায়ে যে আগমন করল সে যেন একটি মুরগি কুরবানি করল। পঞ্চম পর্যায়ে যে আগমন করল সে যেন একটি ডিম কুরবানি করল। পরে ইমাম যখন খুতবা দেওয়ার জন্য বের হন তখন মালাইকা (ফেরেশতাগণ) জিকির শ্রবণের জন্য উপস্থিত হয়ে থাকে।’ (সহিহ বুখারী : ৮৮১)

জুমার দিন পায়ে হেঁটে মসজিদে যাওয়ার ফজিলত বর্ণনায় হাদিসে এসেছে হজরত আওস ইবনে আওস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিনে মাথা ও শরীর ধুয়ে উত্তম রূপে গোসল করে জুমার সময়ের প্রথম সময়েই মসজিদে যায়, কোনও বাহনে আরোহণ না করে পায়ে হেঁটেই মসজিদে যায় এবং ইমামের নিকটবর্তী হয়ে বসে, নিশ্চুপ হয়ে খুতবা শোনে ও কোনও অনর্থক কাজ না করে, তার জন্য প্রত্যেক পদক্ষেপে এক বছর আমল করার সওয়াব হবে।’ (সুনানে আন-নাসায়ী : ১৩৮৪)

জুমার সালাতে উপস্থিত হলে এক জুমা থেকে আরেক জুমা পর্যন্ত গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। এ সম্পর্কে হজরত সালমান ফারসী (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, নবী করিম (সা.) বলছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করে এবং যথাসাধ্য ভালোভাবে পবিত্রতা অর্জন করে ও নিজের তেল হতে ব্যবহার করে বা নিজ ঘরের সুগন্ধি ব্যবহার করে, অতঃপর বের হয় এবং দুজন লোকের মাঝে ফাঁক না করে, অতঃপর তার নির্ধারিত সালাত আদায় করে এবং ইমামের খুতবা দেওয়ার সময় চুপ থাকে, তাহলে তার সে জুমা হতে আরেক জুমা পর্যন্ত সময়ের যাবতীয় গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।’ (সহিহ বুখারী : ৮৮৩)

জুমার দিনের গুরুত্ব সম্পর্কে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘সূর্য উদিত হওয়ার দিনগুলোর মধ্যে জুমার দিন সর্বোত্তম। এ দিন হজরত আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করা হয়েছে, এ দিন তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছে এবং এ দিন জান্নাত থেকে তাকে বের করে দেওয়া হয়েছে এবং জুমার দিনেই ক্বিয়ামাত সংঘটিত হবে।’ (সহিহ মুসলিম : ১৮৬২)

জুমার দিনে একটি বিশেষ সময় আছে যে সময় বান্দা আল্লাহর কাছে যা চাইবে তাই তাকে দেওয়া হবে। এ সম্পর্কে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, ‘আল্লাহর রাসুল (সা.) জুমার দিন সম্পর্কে আলোচনা করেন এবং বলেন, এ দিনে এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে যে কোনও মুসলিম বান্দা যদি এ সময় সালাতে দাঁড়িয়ে আল্লাহর নিকট কিছু প্রার্থনা করে, তবে তিনি তাকে অবশ্যই তা দিয়ে থাকেন এবং তিনি হাত দিয়ে ইঙ্গিত করে বুঝিয়ে দিলেন যে, সে মুহূর্তটি খুবই সংক্ষিপ্ত।’ (সহিহ বুখারী : ৯৩৫)

আল্লাহ আমাদের সবাইকে জুমার দিনের গুরুত্ব উপলব্ধি করার এবং সুন্নতগুলো আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

লেখক : শিক্ষার্থী, আরবি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।