২৮ মে ২০২৫

এভারেস্ট জয় করলেন ৩১ বার, গড়লেন বিশ্বরেকর্ড—অদম্য এক শেরপার গল্প

কিশোর ডাইজেস্ট ডেস্ক
২৭ মে ২০২৫, ২১:১৭
কামি রিতা শেরপা সংগৃহীত

বিশ্বের আর কেউ যা করতে পারেননি, ৫৫ বছর বয়সী কামি রিতা শেরপা তা করলেন; গড়লেন বিরল রেকর্ড। বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ এভারেস্টে ৩১তম বার পা রেখে নিজের গড়া আগের রেকর্ডই ভেঙে নতুন রেকর্ড গড়লেন নেপালের এই পর্বতারোহী। মঙ্গলবার (২৭ মে) তিনি ৩১তম বার এভারেস্টের চূড়ায় ওঠে গড়েছেন নতুন রেকর্ড। বিশ্বের আর কেউ এতবার এভারেস্ট চূড়ায় উঠতে পারেননি। এভারেস্টজয়ীদের ইতিহাসে এ এক অনন্য নজির। 

মঙ্গলবার (২৭ মে) নেপালের স্থানীয় সময় ভোরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটি দলকে গাইড করে নিয়ে গিয়ে ৮ হাজার ৮৪৯ মিটার (২৯ হাজার ৩২ ফুট) উঁচু এভারেস্টের চূড়ায় ওঠেন কামি রিতা শেরপা। নেপালের কাঠমান্ডুভিত্তিক সংস্থা সেভেন সামিটস ট্রেকসের হয়ে কাজ করেন তিনি। তার প্রতিষ্ঠান এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘কামি রিতা শেরপাকে পরিচয় করিয়ে দেওযার কোনও প্রয়োজন নেই। তিনি কেবল একজন জাতীয় পর্যায়ের পর্বতারোহী নায়ক নন, বরং এভারেস্টেরই এক বৈশ্বিক প্রতীক।’

কামি রিতা ‘এভারেস্ট ম্যান’ নামেও পরিচিত। তিনি ১৯৯৪ সালে একটি বাণিজ্যিক অভিযানের নেতৃত্ব দিয়ে প্রথম এভারেস্ট জয় করেছিলেন। এরপর থেকে প্রায় প্রতি বছরই তিনি বিশ্বের সর্বোচ্চ এই পর্বতশৃঙ্গ জয় করে চলেছেন। কোনো কোনো বছরে তিনি দুইবারও এভারেস্ট জয় করেছেন। যেমন: ২০২৩ এবং ২০২৪ সালে দুই বার করে এভারেস্টে আরোহণ করেন তিনি।

কামি রিতার বয়স এখন ৫৫ বছর। বয়স ও অভিজ্ঞতা অনুসারে আরও কয়েক বছর পবর্তারোহীর কাজ করতে পারবেন তিনি। যতবার তিনি এভারেস্ট জয় করবেন, ততবারই বিশ্বরেকর্ড হবে। যতবার তিনি এভারেস্টে উঠবেন, ততবার তিনি তার পুরোনো রেকর্ড ভাঙবেন, প্রতিবার নতুন রেকর্ড গড়বেন।

কামি রিতা সেভেন সামিট ট্রেক কোম্পানির হয়ে কাজ করেন। তার কাজ অন্যান্য পর্বতারোহীদের সহযোগিতা করা, গাইড করা। তাদের নিয়ে এভারেস্ট চূড়ায় ওঠা। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক পাসাং ফুরবা বলেন, ‘তিনি (কামি রিতা) একজন খুবই উজ্জীবিত পর্বতারোহী। তিনি সারা বিশ্বের পর্বতারোহীদের এক অনুপ্রেরণার উৎস।’

কামি রিতার পর সবচেয়ে বেশি ২৯ বার এভারেস্টের চূড়ায় উঠেছেন আরেক শেরপা পাসাং দাওয়া। শেরপা নন, এমন ব্যক্তিদের মধ্যে ব্রিটিশ গাইড কেন্টন কুল সর্বোচ্চ ১৯ বার এভারেস্টের চূড়ায় উঠেছেন। তার পরই ১৫ বার করে এভারেস্ট জয় করেছেন মার্কিন পর্বতারোহী ডেভ হান ও গ্যারেট ম্যাডিসন। আর মাউন্ট এভারেস্ট প্রথম জয় করেন নিউজিল্যান্ডের এডমন্ড হিলারি ও নেপালি শেরপা তেনজিং নোরগে, ১৯৫৩ সালে।

বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোর একটি নেপাল। বিশ্বের ১৪টি সুউচ্চ শৃঙ্গের ৮টিই নেপালে অবস্থিত। দেশটির বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম খাত পর্বতারোহণ ও ট্রেকিং–সংশ্লিষ্ট পর্যটন। দেশটির অর্থনীতি পর্যটনশিল্পের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। নেপালে শেরপাদের পারিবারিক আয়ের গুরুত্বপূর্ণ উৎস বিদেশি পর্যটকদের পথ দেখিয়ে এভারেস্টের চূড়ায় নিয়ে যাওয়া। 

কামি রিতা শেরপা ১৯৭০ সালে হিমালয়ের থামে নামের একটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন, যা সফল পর্বতারোহীদের জন্য একটি বিচরণক্ষেত্র হিসেবে বিখ্যাত।  শৈশব থেকেই তার পরিবার শেরপা গাইড হিসেবে কাজ করত, আর তিনিও বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করে পেশাদার শেরপা হয়ে ওঠেন। তার এই দীর্ঘ পর্বতারোহণ-জীবনে শুধু এভারেস্টই নয়, পৃথিবীর অন্যান্য উচ্চতম পর্বত যেমন চো ইয়ু, লোৎসে, কাঞ্চনজঙ্ঘা ইত্যাদিতেও সফল অভিযান পরিচালনা করেছেন।

অনেকের মতে, কামি রিতা কেবল একজন অভিযাত্রী নন, তিনি মানুষের সম্ভাবনার এক জীবন্ত প্রতীক। বারবার জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পর্বত জয় করে তিনি যেন বলছেন, সীমা বলে কিছু নেই।