০৮ জুন ২০২৫

সৈয়দপুর সরকারি বিজ্ঞান কলেজের সাফল্য বিস্ময়কর, সাফল্যের কারণ কী?

কিশোর ডাইজেস্ট ডেস্ক
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৩:০০
সৈয়দপুর সরকারি বিজ্ঞান কলেজের সাফল্য বিস্ময়কর। ছবি: সংগৃহীত

রেলের শহর হিসেবে খ্যাতি আছে উত্তরের ছোট্ট শহর সৈয়দপুরের। ব্যবসার জন্যও খানিক খ্যাতি আছে। এসব ছাপিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে সৈয়দপুরের অন্য এক খ্যাতি তৈরি হয়েছে। সেটা হলো সৈয়দপুর সরকারি বিজ্ঞান কলেজ। প্রতিবছরই উল্লেখযোগ্য শিক্ষার্থী এই কলেজ থেকে মেডিকেল, ইঞ্জিনিয়ারিং ও সরকারি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পান। এবারও এমবিবিএস ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় ঈর্ষণীয় সাফল্য পেয়েছে কলেজটির শিক্ষার্থীরা। প্রতিষ্ঠানটি থেকে এবার ৫১ জনের মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ জানান, গত বছর ওই কলেজ থেকে ৩৬ জন মেডিক্যালে ভর্তির সুযোগ পেয়েছিলেন। এককভাবে এটি একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য বেশ ভালো অর্জন। এ সাফল্যকে অনেকে ‘বিস্ময়কর’ বলে অবহিত করেছেন।

এ বছর শুধু নয়, ধারাবাহিকভাবে প্রায় প্রতিবছরই সৈয়দপুর সরকারি বিজ্ঞান কলেজের শিক্ষার্থীরা দেশ-বিদেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ পাচ্ছেন। ২০১৬ সালে ৩৮ জন, ২০১৭ সালে ২৯, ২০১৮ সালে ৩৬, ২০১৯ সালে ৩৮, ২০২০ সালে ৪০ এবং ২০২১ সালে ৪০ জন শিক্ষার্থী সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন সৈয়দপুর সরকারি বিজ্ঞান কলেজ থেকে। শুধু তা-ই নয়, বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং চুয়েট, কুয়েট ও রুয়েটের মতো বিভিন্ন প্রকৌশল গুচ্ছেও বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী ভর্তি হন এই প্রতিষ্ঠান থেকে। সৈয়দপুর সরকারি বিজ্ঞান কলেজের শিক্ষার্থীদের সাফল্যের কারণ কী?

জানা গেছে, ১৯৬৪ সালে দেশের চারটি শিল্পাঞ্চলে টেকনিক্যাল স্কুল গড়ে ওঠে। এদের একটি হলো সৈয়দপুর সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল। পরে ১৯৭৭ সালে সৈয়দপুর সরকারি টেকনিক্যাল কলেজে উন্নীত করা হয়। শিক্ষার মান উন্নয়নে ২০১৯ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এর নাম পরিবর্তন করে সৈয়দপুর সরকারি বিজ্ঞান কলেজ নামকরণ করেন। এই কলেজে শুধুমাত্র বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি করা হয়।

দেশের সর্ববৃহৎ সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার সুবাদে এখানে গড়ে ওঠে টেকনিক্যাল স্কুল। উদ্দেশ্য ছিল এখান থেকে সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার জন্য দক্ষ, কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন শিক্ষার্থী গড়ে তোলা। দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের অধীনে শীর্ষ প্রতিষ্ঠান হিসেবে সৈয়দপুর সরকারি বিজ্ঞান কলেজের নাম রয়েছে।

ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবুল কালাম জানান, চলতি বছর কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় শুধুমাত্র বিজ্ঞান বিভাগে ২২৬ জন শিক্ষার্থী ফাইনাল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। এর মধ্যে সবাই পাস করে। আর জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৫৭ জন। এর মধ্যে ৫১ শিক্ষার্থী সরকারি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। এ ছাড়াও বরাবরই এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করে এখানকার শিক্ষার্থীরা।

কলেজটির শিক্ষার্থীদের সাফল্যের কারণ
এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রয়েছে সুশৃঙ্খল পরিবেশ, পাঠদানে শিক্ষকদের আন্তরিকতা এবং কঠোর তদারকি। এ জন্য প্রতিবছর আশানুরূপ ফল করছেন শিক্ষার্থীরা। মূলত শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় প্রতিবছর মেডিকেল ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় ধারাবাহিক সফলতা ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে বলে মনে করেন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ।

জানা যায়, কলেজের শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে একধরনের সেতুবন্ধ তৈরি করা হয়। ক্লাসরুমে সম্পূর্ণ পাঠদান সম্পন্ন করা হয়। শিক্ষার্থীরা যে বিষয়ের ওপর উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করতে চান, তাঁদের শ্রেণির পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি সেসব বিষয়ের বাড়তি পড়াশোনার জন্য বলা হয়। এ ছাড়া এ প্রতিষ্ঠান থেকে ইতিমধ্যে যাঁরা মেডিকেলে বা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন, তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেওয়া হয় বর্তমান শিক্ষার্থীদের। এতে দুই প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের মধ্যে তৈরি হয় সেতুবন্ধ।

শিক্ষক-অভিভাবকদের পাশাপাশি সৈয়দপুর সরকারি বিজ্ঞান কলেজের সাবেক মেধাবী শিক্ষার্থীরাও বর্তমান শিক্ষার্থীদের নানা পরামর্শ ও গাইডলাইন দেন। যার ফলে নতুন শিক্ষার্থীরা দেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ পাচ্ছেন।

এ ছাড়াও অভিভাবকদের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক, আলোচনা ও অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকেরা। প্রতিটি পরীক্ষার আগে অভিভাবকদের সঙ্গে বাধ্যতামূলক একটি বৈঠকের আয়োজন করা হয়। ওই বৈঠকে অভিভাবকদের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার আগে কীভাবে যত্ন নিতে হবে, শিক্ষার্থীদের খাওয়াদাওয়ার বিষয়ে দিকনির্দেশনা, শিক্ষার্থীদের শাসন করে নয়, ভালোবাসা ও বন্ধুত্বমূলক আচরণ করার পরামর্শ দেওয়া হয়।

সর্বাধিক পঠিত