
এই তো কদিন হলো এইচএসসি ফল প্রকাশের। কী একটা সুন্দর দিন কাটল অনেকের। আবার কারও কারও দিনটা ওদের মতো ভালো কাটার কথা, কিন্তু কাটল না তেমনটা। আবার কারও কারও তো পুরো দিনটাই অন্ধকার হয়ে গিয়েছিল। হ্যাঁ, বলছিলাম জিপিএ-৫ পাওয়া আর জিপিএ-৫ না পাওয়া এবং অকৃতকার্য হওয়া শিক্ষার্থীদের কথা। আজ অকৃতকার্য হওয়া শিক্ষার্থীদের কথা নাই বা বললাম। তোমরা আগামীর জন্য ভালো কিছু করো, এটাই আশাবাদ। আজকে বলব জিপিএ-৫ না পাওয়া শিক্ষার্থীদের গল্প। তারা পরীক্ষায় কাঙ্ক্ষিত ফল না পাওয়ায় নিজেকে ব্যর্থ মনে করা শুরু করেছে। দুমড়ে-মুচড়ে গেছে জিপিএ-৫ না পাওয়ার কারণে। এবার প্রশ্ন করি, আসলে কি তারা ব্যর্থ?
আমার মতো সবাই একমত, তারা ব্যর্থ না। ভাববে, এটাই তোমাদের সাফল্যের পথ। আরও দৃঢ়চিত্ত হওয়ার একটা পথ। আরও পরিশ্রমী হয়ে নিজেকে গড়ে তোলার একটা পথ। আজকে দুটো গল্প বলি তোমাদের।
১.
আমার এক বন্ধুর কথা তোমাদের বলি। মন দিয়ে শোনো। আমার বন্ধুর গল্প শুনলে নিজেকে আরও বেশি সৌভাগ্যবান মনে করবে। ওই বন্ধু গ্রামের কলেজে পড়াশোনা করেছে। শহরে যারা পড়াশোনা করেছে তাকে ছোট করেছে দেখেছে। কিন্তু সে এগুলো কখনও মাথায় নেয়নি। সে নিজের মতো করে সামনে এগিয়ে চলেছে। যথাসময়ে এইচএসসি পরীক্ষাও দিল সেই বন্ধু। রেজাল্টও বেরুলো। আমরা তো জিপিএ-৫ পেলাম। কিন্তু ও পেল না। পেল ৪.৫০। প্রথমে একটু ভেঙে পড়েছিল। অনেক কথা তাকে শুনতে হয়েছে। কিন্তু সে তার মনের জোর কখনও হারায়নি। সে সমস্ত দুঃখ-কষ্ট মনে চেপে সবাইকে দেখিয়ে দিতে চেয়েছে সে-ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারে। আর তার স্বপ্ন সে নিজেই পূরণ করতে পেরেছে। সে আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বসে ক্লাস করে। বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয়। আমি নিজেও ওর সাফল্যে অনেক গর্ব করি। সবাইকে বলি, দেখো আমারও একটা বন্ধু আছে।
২.
আরেক বন্ধু ছিল যে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেল। নিজেকে অনেক ঊর্ধ্বে দেখতে শুরু করল। পা যেন তার মাটিতে পড়লই না। পড়াশোনাও ঠিকমতো করল না, আগের মতো ১০-১২ ঘণ্টা পড়ল না। শেষমেশ দেখা গেল সে কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেল না। এখন সে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে সেকেন্ড টাইম দেওয়ার জন্য মনপ্রাণ দিয়ে চেষ্টা করছে। এখন সে বুঝতে পেরেছে তার ভুলগুলো।
তাহলে জিপিএ-৫ না পাওয়া প্রিয় জুনিয়ররা, গল্প দুটো শুনে কিছুটা অনুপ্রেরণা পেলে? তোমরাও পারবে। জিপিএ-৫ পাওনি তো কী হয়েছে? দেশসেরা বিশ্ববিদ্যালয় তো আছে তোমার জন্য। ডাকছে সেইসব বিশ্ববিদ্যালয় তোমাকে। তোমাদের সবার প্রিয় বিজ্ঞান লেখক ও শিশুসাহিত্যিক জাফর ইকবাল স্যার একবার এক সেমিনারে বলেছিলেন, ‘আমি জীবনে কোনোদিন হতাশ হয়ে পড়িনি। সব সময় হাসিখুশি থাকতে চেষ্টা করেছি বলেই আজকে এই অবস্থায় আছি।’ তাহলে তোমরা কেন হতাশ হবে? হতাশ না হয়ে সামনের কথা ভাবো। তুমিও পারবে সবার মতো দেশসেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে। এই মন্ত্রটাই মাথায় যত্ন করে রাখো। এর জন্য তোমাদের কিছু কিছু বিষয়ে সিরিয়াস হওয়া জরুরি।
★ নিজেকে আরও পরিশ্রমী করে গড়ে তোলো।
★ সময়ানুবর্তী হও।
★ বেশি মনোযোগী হও।
★ নিজের দুর্বল জায়গাগুলোতে আরও সচেতন হও।
★ জানার আগ্রহ সৃষ্টি করো।
★ বারবার পড়ো আর পড়ার পর লেখো।
মূলকথা হলো, তোমাদের দুর্বল জায়গাগুলো তোমাদেরই চিহ্নিত করতে হবে। সেই অনুযায়ী সামনের দিকে এগোতে হবে। ইনশাআল্লাহ, ঠিক সময়ে সেই কষ্টের ফল সেরাটাই হবে।
আমি যেহেতু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘খ’ ইউনিটে পরীক্ষা দিয়েছি, সেহেতু তোমরা যারা এই ইউনিটে পরীক্ষা দেবে, তোমাদের অনেক বেশি পড়াশোনা করা উচিত। অনেক মানে ১৮-১৯ ঘণ্টা না। তোমার মস্তিষ্ক যতটুকু নিতে পারে ততটুকুই দিয়ো। এর বেশি দিতে চেষ্টা করো না। না হলে কম্পিউটার যেমন হ্যাং করে, তেমনই তোমার মস্তিষ্কও হ্যাং খেয়ে যাবে!

তোমাদের মাথায় প্রশ্ন আসবে ‘খ’ ইউনিটে কতগুলো সাবজেক্ট আছে?
এই ইউনিটে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ১৭টি বিভাগে নির্ধারিত আসন রয়েছে ১ হাজার ৩৬০টি। এর মধ্যে প্রতি বিভাগ হিসেবে বাংলায় ১২০, ইংরেজিতে ১২০, আরবিতে ১০০, ফারসি ভাষা ও সাহিত্যে ৭৫, উর্দুতে ৭০, পালি ও বুড্ডিস্ট স্টাডিজে ৫০, ইতিহাসে ১১০, দর্শনে ১২০, ইসলামিক স্টাডিজে ১০০, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতিতে ১১০, তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনায় ৬৫, ভাষাবিজ্ঞানে ৭০, সংগীতে ৬০, বিশ্ব ধর্ম ও সংস্কৃতিতে ৬০ ও নৃত্যকলা বিভাগে ৩০টি, থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজে ২৫টি আসন রয়েছে।
সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের বিভাগের ১৬টি বিভাগের মোট আসন সংখ্যা মোট ১০৬৫টি। বিভাগ হিসেবে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ১৫০টি, আন্তর্জাতিক সম্পর্কে ৮০টি, সমাজবিজ্ঞানে ১৫০টি, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতায় ৬০টি, লোকপ্রশাসনে ৯০টি, শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়নে ৪০টি, উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজে ৪০টি, ক্রিমিনোলজিতে ৫০, কমিউনিকেশন ডিজঅর্ডারসে ৩০টি ও জাপানিজ স্টাডিজ বিভাগে শিক্ষার্থী আসন ৫০টি। এ ছাড়া অর্থনীতিতে ১৩০টি, পপুলেশন সায়েন্সেসে ৪০টি ও ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগে ৪০টি, নৃবিজ্ঞানে ৫৫টি, টেলিভিশন ফিল্ম অ্যান্ড ফটোগ্রাফিতে ৩০টি ও প্রিন্টিং অ্যান্ড পাবলিকেশন স্টাডিজে ৩০টি আসন রয়েছে।
আইন অনুষদে আইন বিভাগের আসন সংখ্যা ১১০টি। মানবিক শাখার জন্য ৫৫টি, বিজ্ঞান শাখার জন্য ৩৭টি এবং বাণিজ্য শাখার জন্য ১৮টি আসন বরাদ্দ। এর মধ্যে থেকেই তোমাকে একটি আসন পেতে হবে। তাই মনপ্রাণ দিয়ে চেষ্টা করতে হবে তোমাকে।
এরপর প্রশ্ন করতে পারো, কত নম্বরের হয় প্রশ্ন? ‘খ’ ইউনিটে বাংলা, ইংরেজি ও সাধারণ জ্ঞান থাকে। এই তিনটি বিষয়ের উপরেই মোট ১০০ নম্বরের পরীক্ষা হয়। বাংলা ১৫ নম্বর বহুনির্বাচনি আর ২০ নম্বর লিখিত। ইংরেজিও ১৫ নম্বর বহুনির্বাচনি আর ২০ নম্বর লিখিত। সাধারণ জ্ঞান ৩০ নম্বরের হয়।
এখন প্রশ্ন করতে পারো, কী পড়ব? কোনও কিছুই তো আর নির্দিষ্ট করে বলা যায় না। তবে বাংলার জন্য বোর্ড বই থেকে যেসব সিলেবাসে আছে, ওগুলো ভালো করে পড়া। সাথে ব্যাকরণটাও ভালো করে পড়ো। ইংরেজির জন্য সবচেয়ে বেশি গ্রামাটিক্যাল পড়া জরুরি। ভোকাবুলারি, সিনোনিম-অ্যান্টোনিম, বানান, প্রিপোজিশন, ওয়ার্ড ফ্রেজ বিষয়গুলো ভালো করে পড়ো। সাধারণ জ্ঞানের জন্য স্পেসিফিক কিছু নেই। তবে আগের প্রশ্নের ধরন অনুযায়ী পড়তে পারলে অনেক ভালো হবে।
আসল কথা হলো, তোমরা যারা জিপিএ-৫ না পেয়ে মন খারাপ করে ভেঙে পড়েছ, এই লেখাটা মূলত তাদের জন্য। আর যারা জিপিএ-৫ পেয়েছ তাদের জন্যও এই লেখাটা। জিপিএ-৫ পেয়ে নিজেকে বড় না ভেবে বেশি বেশি করে পড়তে থাকো। আর তোমরা যারা জিপিএ-৫ পাওনি, তারা আরও বেশি পরিশ্রমী হও। ইনশাআল্লাহ, অন্ধকারের নিচেই আলো টাঙানো থাকে। তোমরাও সফল হবে ইনশাআল্লাহ।
লেখক : শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।