১৩ নভেম্বর ২০২৪

কেন পড়বেন বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং

অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তারিক আরাফাত
০২ জুলাই ২০২৪, ১৩:৪৫
দেশের স্বাস্থ্য খাতকে সুসংগঠিত করতে বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মতো বিভাগের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। ছবি: সংগৃহীত

দেশে বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং (বিএমই) বিষয়ে উচ্চ শিক্ষা শুরু হয় প্রায় এক দশক আগে, খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট)। প্রায় একই সময়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়েও (বুয়েট) এ ধরনের বিভাগ খোলা হয়। এ বিভাগকে প্রকৌশল ও ওষুধ প্রযুক্তির সংমিশ্রণ বললেও ভুল হবে না। তবে প্রকৌশলের সঙ্গে সম্পৃক্ত অন্যান্য বিভাগের থেকে বিএমইর পার্থক্য হলো এ বিভাগের শিক্ষার্থীদের ফিজিওলজি, হিউম্যান অ্যানাটমির মতো বিষয় পড়নো হয়। যা ইলেকট্রিক্যাল, মেকানিক্যালের মতো বিভাগে পড়ানো হয় না। বায়োলজিক্যাল সায়েন্সের মৌলিক বিষয়গুলো পড়ানোর কারণে শিক্ষার্থীরা ডাক্তারদের ভাষা বুঝতে পারছেন। এক কথায় বলা চলে স্বাস্থ্য খাতের মেডিকেল ডিভাইস থেকে শুরু করে অন্যান্য সব বিষয়ে এ বিভাগের শিক্ষার্থীদের জ্ঞান প্রদানের চেষ্টা করা হয়।

বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কারিকুলাম চারটি ভাগে বিভক্ত। এগুলো হলো মেডিকেল ইমেজিং অ্যান্ড ইনস্ট্রুমেন্টেশন, বায়োম্যাটেরিয়ালস, বায়োম্যাকানিকস ও বেসিক বায়োলজি। এ বিভাগের গুরুত্ব আসলে অপরিসীম। কারণ দেশের অধিকাংশ মেডিকেল ইকুইপমেন্ট আমদানি করতে হয়। কিন্তু আমাদের স্বনির্ভর হওয়া জরুরি। আবার স্বাস্থ্য খাতে খরচ ও বিনিয়োগ করতে আমরা আসলে বাধ্য। মূলত বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং একটি অ্যাপ্লায়েড ডিসিপ্লিন হওয়ায় দেশ ও দেশের বাইরে এ বিভাগের গ্র্যাজুয়েটদের ব্যাপক গুরুত্ব রয়েছে। দেশের অভ্যন্তরে হাসপাতাল, ক্লিনিকসহ স্বাস্থ্য খাতের সঙ্গে সম্পর্কিত অন্যান্য সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজের সুযোগ রয়েছে। মূলত ফার্মাসিউটিক্যালস ও মেডিকেল ডিভাইস প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানসহ অসংখ্য প্রতিষ্ঠান গ্র্যাজুয়েটদের সম্ভাব্য কর্মক্ষেত্র। একটি বিষয় উল্লেখ করা যেতে পারে যে শুধু চাকরি ও কাজের সুযোগই নয়, সমাজে ব্যাপক অবদানের সুযোগ এ বিভাগের শিক্ষার্থীদের রয়েছে।

দেশের স্বাস্থ্য খাতকে সুসংগঠিত করতে বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মতো বিভাগের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। কারণ স্বাস্থ্য খাতের জন্য দুটি জিনিস লাগছে। একটি হলো হিউম্যান রিসোর্স যেমন ডাক্তার ও নার্স। আরেকটি হলো সার্জিক্যাল অ্যাকসেসরিজ, ড্রেসিং ম্যাটেরিয়ালস কিংবা ইমেজিং ইকুইপমেন্টের মতো মেডিকেল ডিভাইস, যেগুলো ডায়াগনোসিস ও সার্জারি করার ক্ষেত্রে লাগে, এগুলো ডিজাইনিং, ইনস্টলেশন, সার্ভিসিংসহ সব কাজ বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কাজের আওতায় পড়ে। আবার এর সঙ্গে মেডিকেলে ছোটখাটো জিনিস যেমন মেডিকেল গজের মতো ড্রেসিং ইকুইপমেন্ট, সিরিঞ্জ ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানিতে বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শিক্ষার্থী দরকার।

উচ্চ শিক্ষার সুযোগের ক্ষেত্রে এ বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য অন্যান্য বিভাগের শিক্ষার্থীদের চেয়ে সুযোগটা একটু বেশিই। বিষয়টি যেহেতু ব্যবহারিক এখানে স্কলারশিপসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও একটু বেশি। বিশেষ করে দেশের বাইরে। আর দেশে যেহেতু এ বিভাগে পোস্টগ্র্যাজুয়েট শুরু হয়েছে, সেহেতু অভ্যন্তরীণ উচ্চ শিক্ষারও সুযোগ বাড়ছে। এমনকি বুয়েটে পোস্টগ্র্যাজুয়েট লেভেলে স্কলারশিপের ব্যবস্থা রয়েছে। এখানে পিএইচডিতে ৪৫ হাজার টাকা ও মাস্টার্সের জন্য ৩৫ হাজার টাকা করে ফেলোশিপ দেয়া হচ্ছে। এটাও উচ্চ শিক্ষা লাভের ক্ষেত্রে একটা সুযোগ। কারণ আমাদের দেশে পোস্টগ্র্যাজুয়েটে স্কলারশিপের সুযোগ ছিল না বললেই চলে। বুয়েটে যেমন এ সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, আগামীতে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ও তেমন তাদের শিক্ষার্থীদের জন্য এ সুযোগ সৃষ্টির চেষ্টা করবে।

বুয়েটের বায়োমেডিকেল বিভাগ চালুর অল্প সময়ে অর্জিত সাফল্যে আমরা পুরোপুরি সন্তুষ্ট। কারণ যাত্রার প্রথম তিন-চার বছর ল্যাব প্রতিষ্ঠা করতেই চলে গেছে। এর পর থেকে এখন পর্যন্ত মাত্র তিনটি ব্যাচ বেরিয়েছে। এ সময়ের মধ্যে আমাদের শিক্ষার্থীরা বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে সুনাম কুড়িয়েছে। যেমন জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিন বছর ধরে প্রতি বছরই পুরস্কার পাচ্ছে। এ রকম আন্তর্জাতিক মঞ্চের পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরে প্রাপ্ত স্বীকৃতি থেকে বোঝা যায় আমরা গুণগত শিক্ষা নিশ্চিত করতে পেরেছি।

মেডিকেল ডিভাইস বানানো অনেক বেশি সহজ। যেখানে ওষুধ বানানো প্রযুক্তিগতভাবে একটু জটিল। সুতরাং মেডিসিন যদি রফতানি করতে পারি, তাহলে মেডিকেল ডিভাইসও আগামীতে রফতানি করা যাবে। এখন করণীয় সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ ও সদিচ্ছা। বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং খাতের সম্ভাবনা অনেক। উচ্চ শিক্ষা অর্জনে এক নতুন ও সম্ভাবনাময় দুয়ার উন্মোচিত হয়েছে এ বিভাগের মাধ্যমে।

লেখক: চেয়ারম্যান, বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ. বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

সর্বাধিক পঠিত