২৭ জুলাই ২০২৪

শারীরিক প্রতিকূলতাকে জয়, ৩ ফুট উচ্চতা নিয়ে চিকিৎসক হলেন গণেশ

কিশোর ডাইজেস্ট ডেস্ক
২৬ মার্চ ২০২৪, ১৭:৩০
ভারতের তরুণ চিকিৎসক গণেশ বারাইয়া। ছবি: সংগ্রহ

২৩ বছর বয়সী গণেশ বারাইয়া। বাকি পাঁচজনের থেকে আলাদা গণেশ, কারণ তাঁর উচ্চতা মাত্র তিন ফিট। স্বল্প উচ্চতার জন্য প্রায় আত্মীয়স্বজন থেকে শুরু করে প্রতিবেশি এবং বন্ধুদের কটাক্ষ শুনতে হত তাঁকে। তাঁদের মুখ বন্ধ করতে বেছে নিয়েছিলেন পড়াশোনাকে। সমাজে নিজেকে বিশেষ ভূমিকায় ২৩ বছর বয়সী গণেশ বারাইয়া। বাকি পাঁচজনের থেকে আলাদা গণেশ, কারণ তাঁর উচ্চতা মাত্র তিন ফিট। প্রতিষ্ঠিত করতে পারলে যোগ্য জবাব যে দেওয়া যাবে, মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন তিনি। সেই স্বপ্ন সফল হয়েছে গণেশ বারাইয়া-র। সমস্ত প্রতিকূলতাকে জয় করে ৩ ফুট উচ্চতার ২৩ বছরের গুজরাটের বাসিন্দা গণেশ আজ প্রতিষ্ঠিত চিকিৎসক।

অদম্য ইচ্ছা থাকলে স্বপ্ন পূরণে কোনো কিছু্‌ বাধা হতে পারে না—এ কথা বিজ্ঞজনদের। সেটিই যেন এবার সত্যি করে দেখালেন ভারতের এই তরুণ গণেশ বারাইয়া। সব বাধা পেরিয়ে চিকিৎসাবিজ্ঞানে পড়াশোনা শেষ করেছেন, হয়েছেন চিকিৎসক। তবে তার চিকিৎসক হওয়ার পথ ছিল অনেক কঠিন, লড়াই ও সংগ্রামের।

ভারতের তরুণ চিকিৎসক গণেশ বারাইয়া। ছবি: সংগ্রহ

গণেশের লড়াইয়ের কাহিনী
২৩ বছর বয়সী গণেশের বাড়ি ভারতের গুজরাট রাজ্যে। আর দশজনের মতোই সুস্থ–স্বাভাবিক তিনি। বেশ মেধাবী। উচ্চতাটাই শুধু তুলনামূলক কম—তিন ফুট। এটাই তাঁর চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন পূরণে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছিল।

২০১৮ সালে ডাক্তারি এনট্রান্স পরীক্ষায় সফল হয়েছিলেন তিনি। এমবিবিএস পড়ার জন্য গুজরাটের ভাবনগর মেডিক্যাল কলেজে গিয়েছিলেন ভর্তি হতে। কিন্তু সেই সময় তাঁকে ভর্তির অনুমতি দেয়নি মেডিক্যাল কাউন্সিল। সংস্থার মতে, গণেশের উচ্চতা কম। জরুরি ভিত্তিতে রোগীর চিকিৎসা করা, তাঁর পক্ষে অসুবিধার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে করা হয়েছিল আশঙ্কা।

আদালতের দ্বারস্থ গণেশ
কাউন্সিলের সিদ্ধান্তে মুষড়ে পড়েছিলেন গণেশ বারাইয়া। তবে নিজের লক্ষ্য পূরণে অটল ছিলেন গণেশ। অদম্য মনোবল নিয়ে সাহায্যের জন্য ছুটে গিয়েছিলেন নিজের স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কাছে। তারপর একে একে দ্বারস্থ হন জেলা কালেক্টর ও রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রীর। তাঁদের পরামর্শে মেডিকেল কাউন্সিলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন গুজরাট হাইকোর্টে। তবে রায় তাঁর পক্ষে আসেনি।

এতেও দমে যাননি গণেশ। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন সুপ্রিম কোর্টে। নিজের স্বপ্ন সত্যি করতে সেখানেই প্রথম জয়টা পান তিনি। ২০১৮ সালে শীর্ষ আদালত হাইকোর্টের রায় খারিজ করেন। ফলে বাধা কেটে যায়।

হাসপাতালের চিকিৎসক হিসেবে কাজ করছেন গণেশ
দীর্ঘ আইনি পথ পার করে ২০১৯ সালের ১ অগস্ট গুজরাটের ভাবনগর মেডিক্যাল কলেজে এমবিবিএস পড়তে ভর্তি হয়েছিলেন গণেশ বারাইয়া। শুরু হয় তাঁর চিকিৎসক হওয়ার লড়াই। সম্প্রতি ফাইনাল পরীক্ষায় ভালো ফল করে এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন করেছেন। ভাবনগরের একটি সরকারি হাসপাতালে ইন্ট্রান হিসেবে কর্মরত তিনি।

গণেশ এখন প্রতিদিনই মানুষের চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন। উচ্চতা নিয়ে তেমন কোনো সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন তিনি। গণেশের কথায়, ‘যখনই কোনো রোগী আমাকে দেখেন, প্রথমে একটু চমকে যান। তারপর অবশ্য তাঁরা আমাকে স্বাভাবিকভাবেই গ্রহণ করেন। আর আমিও তাঁদের প্রথমে ধন্দে পড়ে যাওয়াটা মেনে নিই। তাঁরা আমার সঙ্গে বেশ ভালো ও ইতিবাচক আচরণ করেন। চিকিৎসা পেয়ে খুশিও হন তাঁরা।’

শারীরিক প্রতিকূলতার সত্বেও গণেশ বারাইয়া এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন করায় খুশি ভাবনগর মেডিক্যাল কলেজের ডিন হেমন্ত মেহতা। গণেশের এই ইচ্ছাশক্তি, অন্যদের অনুপ্রাণিত করবে বলে মনে করছেন তিনি। সেই সঙ্গে আগামী দিনে গণেশের সাফল্যও কামনা করেছেন।

সূত্র : এনডিটিভি