০১ জুলাই ২০২৫

কৈশোরে যেসব অভ্যাস গড়ে তোলা জরুরি

শাকিব হুসাইন
০৬ জানুয়ারি ২০২৪, ১৮:০৭
শারীরিক ও মানসিক বিকাশে কিছু পরামর্শ মেনে চলতে হবে। প্রতীকী ছবি

কথায় আছে, মানুষ অভ্যাসের দাস। অভ্যাসই একজন মানুষকে যেমন কর্মময় করে তোলে, তেমনই অলস করে তুলতে পারে। কিছু কিছু অভ্যাস আছে যেগুলো আমাদের মেনে চলতে হবে। আবার কিছু কিছু অভ্যাস আছে যেগুলো আমাদের বর্জন করতে হবে। একবার খারাপ অভ্যাস হয়ে গেলে তা সংশোধন করতে সময় লাগে। এজন্য আমাদের সু-অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। এর জন্য আমাদের বিভিন্ন বিষয় অনুসরণ করতে হবে। তাহলে দেখা যাক কী কী বিষয় অনুসরণ করা প্রয়োজন—

সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠা
যে ব্যক্তি সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠে, সারা দিন তার মন ফ্রেশ থাকে। ভোরে ঘুম থেকে উঠলে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বেড়ে যায়। ফলে কাজে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা কমে আসে। গবেষণায় দেখা গেছে, ভোরে ওঠা ব্যক্তি অন্যদের তুলনায় বেশি সক্রিয় থাকে এবং কাজে সময় নেয় কম। ভোরে ঘুম থেকে উঠলে মানসিক চাপ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। যখন কেউ ভোরে ওঠে, তখন কাজের তাড়া স্বাভাবিকভাবে কমে আসে। এজন্য আমাদের ভোরে ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।

বেশি রাত না জাগা
ইংরেজিতে একটা প্রবাদ আছে, আরলি টু বেড অ্যান্ড আরলি টু রাইজ, মেকস এ ম্যান হেলদি অ্যান্ড ওয়াইজ। যে ব্যক্তি সকাল সকাল ঘুমায় এবং সকাল সকাল জেগে ওঠে, সে স্বাস্থ্যবান, ধনবান ও বুদ্ধিবান হবে। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা প্রায়ই রাত জাগে তাদের উদ্বিগ্নতা, অবসাদ ও বাইপোলার ডিজঅর্ডারে ভোগার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এমনকি রাতে না ঘুমানোর সঙ্গে আত্মহত্যা প্রবণতারও সম্পর্ক রয়েছে। আবার নিয়মিত ত্বকের যত্ন নেওয়ার পরও ব্রণ বা চোখের চারপাশে কালো দাগ হচ্ছে। নিয়মিত রাত জাগা এর একটা কারণ হতে পারে। এই একই কারণে অকালে চেহারায় বয়সের ছাপ ও ত্বক শুষ্ক হয়ে যেতে পারে। চিকিৎসকেরা বলেন, রাতে মানুষের ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমানো প্রয়োজন, যেন দিনের বেলা দেহ ও মন কর্মক্ষম থাকতে পারে। ঘুমে অনিয়ম মানুষের কাজের উদ্যম কমিয়ে দিতে পারে। এমনকি রাতে ঘুম কম হলে মানুষের ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়। আমাদের বেশি রাত না জাগার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।

পুষ্টিকর স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খেতে হবে। ছবি : সংগৃহীত

স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খাওয়া
মানুষের পাঁচটি মৌলিক অধিকারের মধ্যে খাদ্য প্রথম। খাবার ছাড়া কেউ বাঁচতে পারবে না। কিন্তু সবাইকে আদর্শ খাবারটি খেতে হবে। পুষ্টিকর স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্য মস্তিষ্কের বিকাশে সহায়তা করে। ব্রেইনের প্রোটিন ও এনজাইম নিউরো ট্রান্সমিটার হিসেবে কাজ করে, কিছু হরমোন নিয়ন্ত্রণ করে এবং স্নায়ুতন্ত্র ও মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যকে উন্নত করে। খাদ্য অন্ত্রের উপকারী ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি করে, যা অন্ত্রের ভেতরের অবস্থাকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। ফলে অন্ত্রের প্রদাহ কমে যায়। প্রদাহ চিন্তাধারা ও মেজাজের ওপর প্রভাব ফেলে। পরিপাকতন্ত্রে সেরোটিনিন উৎপন্ন হয়। খাদ্য সেরোটিনিন মাত্রা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। সেরোটিনিন স্নায়ুকে সংযোগকারী একটি নিউরোট্রান্সমিটার, যা মেজাজ, আনন্দ, চিন্তা, ঘুম প্রভৃতি প্রভাবিত করে। কিছু কিছু খাদ্য আমাদের মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। তাই আমাদের পুষ্টিকর স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খেতে হবে।

নিয়মিত মলমূত্র ত্যাগ করা
প্রত্যেক মানুষের উচিত নিয়মিত সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর মলমূত্র ত্যাগ করা। নিয়মিত মলত্যাগের মাধ্যমে নিজেকে হালকা মনে হবে। প্রতিদিন মলত্যাগের অভ্যাস গড়ে তুললে ঝকঝকে দিন কাটবে। প্রতিদিন ঘুম ও খাওয়ার একটা নির্দিষ্ট সময় মেনে চলা উচিত। এই অভ্যাসের ভিত্তিতেই মলত্যাগের রুটিন গড়ে উঠবে।

নিয়মিত ব্যায়াম করা
শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা এবং আনন্দ লাভের জন্য আমাদের ব্যায়াম করা অতি জরুরি। ব্যায়াম দেহ ও মনকে সতেজ রাখে। নিয়মিত ব্যায়াম করার ফলে শক্তি বাড়ে, হৃৎপিণ্ড সতেজ হয়, হজমশক্তি ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। আমাদের সবার উচিত প্রতিদিন সকালে ব্যায়াম করা। সকাল সকাল মুক্ত পরিবেশে হাঁটাহাঁটি করা।

সময়ের মূল্য দিতে শেখা
প্রাচীনকাল থেকেই একটা প্রবাদ মানুষের মুখে মুখে; তা হলো, সময় ও স্রোত কারও জন্য অপেক্ষা করে না। যে ব্যক্তি সময়ের কাজ সময়ে করে, সে সবার চেয়ে অনেক এগিয়ে থাকবে। কিন্তু যে ব্যক্তি সময়ের কাজ সময়ে করে না, সে কখনও সামনে এগিয়ে যেতে পারে না। পরিশ্রমীদের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারে না। পরিশ্রমীরা সময়ের সঠিক ব্যবহার করে বিধায় তারা উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছায়। কিন্তু যারা অলস সময় পার করে, তারা জীবনে উন্নতির দেখা পায় না। আমাদের সবাইকে সময়ের মূল্য দিতে শিখতে হবে। সময়ের কাজ সময়ে করতে হবে।

সর্বাধিক পঠিত